সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিএনপির একাধিক অভিযোগ
-1150329.jpg?v=1.1)
ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলের অভিযোগ, সরকারের কিছু উপদেষ্টার বক্তব্য ও কার্যক্রমে নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল ও পদায়নের ক্ষেত্রেও পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তুলেছে তারা।
বিএনপির দাবি, মাঠ পর্যায়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল গঠনের সময়ও একটি বিশেষ দলের লোকজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এসব ঘটনায় দলটি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিএনপি মনে করে, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের এখনই নিরপেক্ষ অবস্থান স্পষ্ট করা জরুরি। এ জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো নির্দলীয় চরিত্রে নিজেদের ভূমিকা গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছে তারা।
গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এমন অবস্থায় শিগগির প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তারা সাক্ষাৎ করবেন। সেখানে এ বিষয়গুলো প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করার পাশাপাশি তাদের উদ্বেগের কথাও জানাবেন। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
জানা গেছে, বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি জুলাই জাতীয় সনদসহ সাংগঠনিক নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দলটির নীতিনির্ধারকরা অভিমত ব্যক্ত করে বলেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা এমন সব কথা বলছেন, কার্যক্রম করছেন—যাতে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তবে এই সরকার তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলুক কিংবা এটা নিয়ে নতুন করে কোনো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হোক, সেটা তারা চান না। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, যেহেতু নির্বাচন আসন্ন এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করা সরকারের লক্ষ্য; সুতরাং সেই নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত, নিজেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে সাজানো, যাতে প্রশাসনিক বা সিদ্ধান্তগ্রহণমূলক কোনো কাজ নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে।
দলটি মনে করছে, ৫ আগস্টের পরে প্রশাসনিক যে রদবদল বা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে, সেখানে একটি দলের লোকজনকে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলেছেন, নির্বাচন সামনে রেখে প্রশাসনিক যে নিরপেক্ষতা, সেটা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য তাদের দৃশ্যমান সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিতে হবে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, বিগত ১৭ বছরের যে ফ্যাসিবাদী সরকার, তাদের যে প্রশাসন সেখান থেকে তাদের লোকজনকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে সরানো হয়নি; একই সঙ্গে আরও একটি বিশেষ দলের লোকজনকেও নতুন করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসানো হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। জুলাই সনদ এখন স্বাক্ষরের পর্যায়ে রয়েছে। বিএনপি এই সনদে স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী ১৭ অক্টোবর সনদ স্বাক্ষরের দিন শতাধিক নেতার সমন্বয়ে গঠিত বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগদান করবে। আর দলের পক্ষ থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বহুল আলোচিত জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবেন।
এ ছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে গণসংযোগের প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। মাঠ পর্যায়ে তাদের যে প্রচার রয়েছে, সেখানে ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছে দলটি। এ ক্ষেত্রে প্রচারে আরও কীভাবে গতি আনা যায় এ লক্ষ্যে দলের মিডিয়া সেল ও কমিউনিকেশন সেলকে কীভাবে আরও সক্রিয় এবং দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাজে লাগানো যায়, সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিএনপির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে নানামুখী অপপ্রচার চলছে, নতুন নতুন ন্যারেটিভের মাধ্যমে সেটাকে কীভাবে অ্যাড্রেস করা যায়, আলোচনা হয়েছে তা নিয়েও। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলের প্রচার-প্রচারণা আরও জোরদার করার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বৈঠকে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে এ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সেখানে অভিমত এসেছে, সারা দেশে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার যে প্যানেল প্রস্তুত করা হচ্ছে, সেটির অধিকাংশ কর্মকর্তা ছাত্রজীবনে বিশেষ একটি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারা এখন ওই সংগঠনের মূল দলের সঙ্গে জড়িত। এমনটা হলে নির্বাচনে তারা একটা বিশেষ দলকে বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখতে পারে।