ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে কী বললেন তারেক?

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:০৮ AM

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে সরকার গঠনের সক্ষমতা অর্জন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রভাবশালী দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে লন্ডনে পরিবারসহ বসবাসরত তারেক রহমান জানান, তিনি শিগগিরই নির্বাচনে অংশ নিতে দেশে ফিরবেন। তাঁর ভাষায়, “আমি মনে করি, আমার বাংলাদেশে ফেরার সময় এখন খুব কাছেই।”

বাংলাদেশে একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন ঘটানো ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থান সম্পূর্ণ হবে না বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান। সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিতভাবে জিতব। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এককভাবে সরকার গঠনের অবস্থানে আমরা আছি।’

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যারাই পরবর্তী সরকার গঠন করুক, তাদেরই দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি সামাল দিতে হবে। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ তৈরি পোশাক খাত যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের মুখে পড়েছে। এছাড়া প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনমনও তাদের মোকাবিলা করতে হবে। পালিয়ে ভারতে গেছেন শেখ হাসিনা।

জনমত জরিপে বিএনপি এগিয়ে আছে, তাই ফেব্রুয়ারির ভোটের পর তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনায় নিষিদ্ধ করেছে।

আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট বলে মুহাম্মদ ইউনূস যে দাবি করেন, তার প্রতিধ্বনি করেছেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, বিএনপি অন্যান্য দলকে নিয়ে সরকার গঠনে প্রস্তুত। এসব দলের মধ্যে গত বছর অভ্যুত্থানে সামনের কাতারে থাকা ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি নতুন দলও রয়েছে। আমরা তাদের রাজনীতিতে স্বাগত জানাব। তারা তরুণ, তাদের একটা ভবিষ্যৎ আছে।

সাক্ষাতকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের জন্য ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক কর্মসূচির কিছু নতুন দিক তুলে ধরেছেন। তার মধ্যে আমাজন, ই বে ও আলিবাবার মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘সরবরাহ কেন্দ্র’ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার মধ্য দিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানির বাইরে অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করার মতো বিষয় রয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, ভারতের সঙ্গে ‘সবকিছুর আগে বাংলাদেশ’ পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বন করবেন তিনি। ঐতিহাসিকভাবে শেখ হাসিনাকে সমর্থন যুগিয়ে আসা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এত দিনের সম্পর্ককে ‘একপাক্ষিক’ হিসেবে বর্ণনা করে একে নতুনভাবে শুরু করার কথা বলেছেন তিনি।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস লিখেছে, বাংলাদেশে বড় দুই রাজনৈতিক দলের তিক্ত পারিবারিক রেষারেষি রয়েছে। শেখ হাসিনা দেশটির স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা ও প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানে কন্যা। ১৯৭৫ সালে একদল সেনাসদস্যের হাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ শেখ মুজিব নিহত হয়েছিলেন।

তারেক রহমানের বাবা জিয়াউর রহমানও দেশের আরেকজন সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং স্বাধীনতাসংগ্রামে তারও অবদান রয়েছে। ১৯৮১ সালে তিনি নিহত হয়েছিলেন। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তারেক রহমানের মা খালেদা জিয়া কয়েক দশক ধরে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

৫৯ বছর বয়সি তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে নির্বাসনে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মামলা হয়েছিল, যেগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছেন তিনি। তারেক রহমান অঙ্গীকার করেছেন, নতুন বিএনপি সরকার প্রতিহিংসার বৃত্ত ভেঙে দেবে। এ প্রসঙ্গে তিনি গত বছর আগস্ট থেকে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য দলের সাত হাজার সদস্যকে বহিষ্কার বা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগের আওতায় আনার কথা উল্লেখ করেছেন।

তবে আওয়ামী লীগকে আবার রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ দেওয়া হবে কিনা, এ বিষয়ে তিনি স্পষ্ট উত্তর দেননি। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে চলমান মামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তারেক রহমান বলেছেন, ‘যদি তারা দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে আওয়ামী লীগ কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে?’

তারেক রহমান জানান, নির্বাচিত হলে তিনি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশাসন শত শত কোটি ডলার উদ্ধারের যে চেষ্টা চালিয়ে আসছে, সেটা অব্যাহত রাখবেন। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা এসব অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন বলে অন্তর্বর্তী সরকারের অভিযোগ।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকালে দুর্নীতি ও নিষ্ঠুরভাবে বিরোধী মত দমনের ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনা রয়েছে।