আল জাজিরার প্রতিবেদনে ভয়ংকর তথ্য

জুলাইয়ে ‘অপারেশন ক্লিনডাউন’ চালিয়েছিল শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৪ PM

গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। সম্প্রতি বিবিসির যাচাই করা একটি কথোপকথনের অডিও ফাঁস হওয়ার পর, একই প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার একাধিক গোপন ফোনালাপ সম্প্রচার করা হয়, যেখানে তাকে ছাত্র আন্দোলন দমন করতে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিতে শোনা যায়। এমনকি হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর অনুমতিও দেন তিনি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ওই অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন ক্লিনডাউন’।

অডিও রেকর্ড বিশ্লেষণ করে আল জাজিরা জানায়, শেখ হাসিনা তার গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ছাত্রদের ওপর গুলি করার নির্দেশ দেন। আল জাজিরার তদন্তকারী দলের দাবি, এ অডিও ক্লিপগুলো সরবরাহ করেছে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মহলে থাকা নিজস্ব গোয়েন্দা সদস্যরা।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে একটি ফোনালাপে ১৮ জুলাই ২০২৪ তারিখে শেখ হাসিনা ঢাকার দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপশকে বলেন, আমার নির্দেশ তো আগেই দেওয়া হয়ে গেছে। আমি তো পুরোপুরি ওপেন অর্ডার দিয়ে দিয়েছি। এখন ওরা মারবে, যেখানে পাবে সেখানে গুলি করবে আমি তো এতদিন থামিয়ে রেখেছিলাম। আমি ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছিলাম।

অন্য এক রেকর্ডিংয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যেখানে কোনো জটলা দেখবে, সেটা উপর থেকে, এখন তো ওপর থেকেই হচ্ছে, এরই মধ্যে কয়েক জায়গায় শুরু হয়ে গেছে। শুরু হয়ে গেছে। কিছু সরেছে।

তিনি বলেন, এখন লেথাল উইপন ব্যবহার করবে। যেখানে পাবে সেখানে গুলি করবে।

এ ছাড়াও প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রংপুরে আবু সাঈদের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা নিয়েও তৎকালীন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা হস্তক্ষেপ করেন। হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন মহলে ফোন করেন তারা। রংপুর মেডিকেলে ফোন করে আবু সাইদের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন চান সালমান এফ রহমান।

আল জাজিরার ভাষ্য অনুযায়ী, পুলিশ শুরুতে বিক্ষোভকারীদের দোষারোপের চেষ্টা করে। কিন্তু এক পুলিশ কর্মকর্তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, প্রতিবার রিপোর্ট জমা দিতে গেলেই পুলিশ অখুশি হয়। 

প্রতিবেদনে এক ফোনালাপে সালমান এফ রহমান বলেন, রংপুর মেডিকেলে পোস্টমর্টেম হয়েছে তো? তাহলে প্রতিবেদন দিতে দেরি কেন? কে লুকোচুরি খেলছে? রংপুর মেডিকেল?

অনুসন্ধানে আলজাজিরা আরও দাবি করেছে, তারা ফাঁস হওয়া গোপন নথিপত্রে দেখেছে কীভাবে শেখ হাসিনার সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে সহিংসতার ছবি বিশ্ববাসীর কাছ থেকে গোপন রেখেছিল।

আল জাজিরার দাবি, শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন এবং তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আদালতে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গৃহীত হয়েছে। তবে হাসিনা এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। তার বক্তব্য, তিনি কখনোই প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ দেননি। পাশাপাশি, তিনি ফাঁস হওয়া ফোনালাপের সত্যতাও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনা এখনও তদন্তাধীন বলেও জানান তিনি।

এদিকে আল জাজিরাকে পাঠানো বিবৃতিতে কল রেকর্ডিংগুলো অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ বলেছে, শেখ হাসিনা কখনো ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহারের নির্দেশ দেননি এবং ১৮ জুলাইয়ের রেকর্ডিংকে ভুয়া বলেছে তারা। একইসঙ্গে, আবু সাঈদের পরিবারের আতঙ্ক নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেও, সরকারি বাহিনীর অসদাচরণ তদন্তে শেখ হাসিনার আগ্রহ ছিল বলেও দাবি করেছে।

বিবৃতিতে ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে তারা জানায়, আন্দোলনকারীদের ‘ভাঙচুরে’ ইন্টারনেট অবকাঠামোর ক্ষতি কারণে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এ ফোনালাপসমূহ ভবিষ্যতে আদালতের বিচার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। পুরো প্রতিবেদনের সম্প্রচার সময় নির্ধারিত হয়েছে আজ (বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই) দুপুর ১২টা এবং আগামীকাল শুক্রবার (২৫ জুলাই) রাত ১টায়, আল জাজিরার পর্দায়।