শেখ হাসিনা ও রেহানার পরিবারসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

রাজধানীর পূর্বাচলে অনিয়মের মাধ্যমে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা এবং তাদের পরিবারের সদস্যসহ মোট ২৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ সোমবার (১০ মার্চ) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে চার্জশিট অনুমোদন হওয়ার পর আদালতে দাখিল করার প্রক্রিয়া চলছে। গত ১২, ১৩ এবং ১৪ জানুয়ারি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন এবং জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৪ কর্মকর্তা। তাদের বিরুদ্ধে মোট ৮টি পৃথক অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
নতুন চার্জশিটে সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এবং প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিনকে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নং রাস্তার ৬টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ১৬১/১৬৩/১৬৪/৪০৯/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
চার্জশিটে শেখ পরিবারের আসামিরা হলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক (ব্রিটিশ এমপি), তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এবং মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক।
জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৪ জন পুরোনো আসামি হলেন- ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান এবং হাবিবুর রহমান।
অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সরকারের বিশেষ ক্ষমতার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহায়তায় নিজে, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপান্তির নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দের অভিযোগ রয়েছে।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক ২৭ ডিসেম্বর জানিয়েছিল যে শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হবে। গত দেড় দশক ধরে দেশ শাসনের পর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি।
দুদক গত বছরের ২২ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন ডলার (৩০ হাজার কোটি টাকা) বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করতে একটি পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। কমিশন ওই একই দলকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগটি অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয়। সবগুলো অনুসন্ধান এখনও পর্যবেক্ষণাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।