বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে বাংলাদেশের উন্নতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ০৫ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩৮ PM

বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে (জিটিআই) আগের বছরে চেয়ে ২০২৫ সালে তিন ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৩২তম। তবে চলতি বছর তা ৩৫তম। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচারে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের প্রভাব কমে যাওয়ায় এই উন্নতি হয়েছে।

বুধবার (০৫ মার্চ) অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিসের (আইইপি) প্রকাশিত বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচক-২০২৫শে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদের প্রধান বৈশ্বিক প্রবণতা ও বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে স্কোর গণনায় পাঁচ বছরের সময়কাল ধরে প্রত্যেক বছর এই সূচক প্রকাশ করে আসছে।

ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিসের ১২তম সংস্করণে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ভারত, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক গড়ের তুলনায় বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের প্রভাব কম ছিল।

জিটিআই ২০২৫ সালের সূচকে বাংলাদেশ ৩ দশমিক ০৩ স্কোর পেয়েছে। শূন্য থেকে ১০ স্কোরের মধ্যে শূন্য স্কোর হলে ওই দেশে সন্ত্রাসবাদের কোনো প্রভাব নেই বলে ধরে নেওয়া হয়। আর ১০ স্কোর হলে সন্ত্রাসবাদের সর্বাধিক প্রকোপ রয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

এ বছর বিশ্বের ১৬৩টি দেশ নিয়ে ১০০টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস। বাংলাদেশ ৩ দশমিক ০৩ স্কোর নিয়ে সূচকে ৩৫তম অবস্থানে রয়েছে। গত বছর অবস্থান ছিল ৩২তম। সে হিসেবে ৩ ধাপ উন্নতি করেছে বাংলাদেশ।

বিশ্বব্যাপী এক বছরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা, হামলায় নিহত বা আহত ব্যক্তির সংখ্যা এবং সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হওয়ার পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের এই সূচক তৈরি করে ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস।

সিডনিভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, সন্ত্রাসবাদ এখনও বৈশ্বিক হুমকি হিসেবে রয়ে গেছে। বছরে অন্তত একটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে এমন দেশের সংখ্যা ২০২৪ সালে আগের বছরের তুলনায় ৫৮ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬৬ হয়েছে।

সূচকে উন্নতি করা দেশের তুলনায় সন্ত্রাসবাদের অবনতি ঘটানো দেশের সংখ্যা গত সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো বেড়েছে। বিশ্বের ৪৫টি দেশে সন্ত্রাসবাদের অবনতি ঘটেছে, আর উন্নতি ঘটেছে মাত্র ৩৪টি দেশে।

আইইপি বলেছে, 'গত বছর বিশ্বে চারটি প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের সহিংসতা আরও তীব্র করে তুলেছে। এর ফলে আগের বছরের তুলনায় প্রাণহানি বেড়েছে প্রায় ১১ শতাংশ।'

সূচকে হামলা ও প্রাণহানির হিসেবে এ বছর সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তকমা পেয়েছে আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসো। বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদের কারণে যত সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, তার এক পঞ্চমাংশই এই দেশটিতে ঘটেছে। এরপরই রয়েছে পাকিস্তান ও সিরিয়া।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে সর্বোচ্চ গড় স্কোর পেয়েছে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল। গত এক দশক ধরে সন্ত্রাসবাদের শীর্ষ অঞ্চলের অবস্থান ধরে রেখেছে দক্ষিণ এশিয়া।'

আইইপি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে , দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সন্ত্রাসবাদের বৈশ্বিক সূচকে খারাপ অবস্থানের জন্য প্রধানত পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দায়ী। তবে এক দশক আগের তুলনায় পাকিস্তান ছাড়া এ বছর দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশই এই সূচকে উন্নতি করেছে।

আইইপি আরও জানিয়েছে, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হ্রাস পাওয়ার ফলে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নতি হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, এই অঞ্চলের সবচেয়ে খারাপ সন্ত্রাসবাদের পরিস্থিতি আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানে রয়েছে। এই দুই দেশ বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির দশটি দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।

সূচকে আরও বলা হয়েছে, 'দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সবচেয়ে সন্ত্রাসবাদী দেশ পাকিস্তান। দেশটির স্কোর ৮ দশমিক ৩৭৪। একই সঙ্গে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের পরই রয়েছে আফগানিস্তান; ৭ দশমিক ২৬২ স্কোর নিয়ে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে দ্বিতীয় রয়েছে দেশটি। এছাড়া ৬ দশমিক ৪১১ স্কোর নিয়ে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে ১৪তম স্থানে আছে ভারত।'

আইইপির সূচকে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সাতটি দেশের মধ্যে কেবল ভুটান এবং শ্রীলঙ্কার জিটিআই স্কোর শূন্য। এর মানে হচ্ছে গত পাঁচ বছরে এই দুটি দেশে সন্ত্রাসী হামলার কোনো রেকর্ড নেই। এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদে তৃতীয় সর্বনিম্ন প্রভাবিত দেশ হলো নেপাল। দেশটির স্কোর ১.১১৩। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে নেপালের অবস্থান ৬৮তম।