গণতন্ত্র বহাল রেখে নতুন ৪ মূলনীতির সুপারশি সংবিধান সংস্কার কমিটির

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৬ PM

একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান আদর্শ এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনস্বরূপ সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে “সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র” প্রস্তাব দিয়েছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। এছাড়া একটি কার্যকর গণতন্ত্র, মৌলিক মানবধিকার সুনিশ্চিতকরণ এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাতটি প্রধান বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছে সংস্কার কমিশন।

আজ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কাছে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সার-সংক্ষেপ সুপারিশ জমা দেয়। অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের সংস্কারের সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন জমা দেয়।

সাতটি প্রধান বিষয়:

১. ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের আদর্শ এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনস্বরূপ সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে “সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র” প্রস্তাব।

২. ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা।

৩. প্রধানমন্ত্রী পদের একচ্ছত্র ক্ষমতা হ্রাস।

৪. অন্তর্বর্তী সরকার কাঠামোর সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব।

৫. বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ।

৬. শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সুনিশ্চিতকরণ।

৭. মৌলিক অধিকারের আওতা সম্প্রসারণ, সাংবিধানিক সুরক্ষা ও বলবৎযোগ্যতা নিশ্চিতকরণ।

নাগরিকতন্ত্রের বিষয়সমূহ:

১. সংবিধানে ‘প্রজাতন্ত্র’ ও ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’-এর পরিবর্তে ‘নাগরিকতন্ত্র’ ও ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ ব্যবহারের সুপারিশ।

২. রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে বাংলা নির্ধারণ, পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রচলিত সকল ভাষাকে রাষ্ট্রের ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।

৩. নাগরিকত্বের সংজ্ঞায় “বাংলাদেশি” শব্দটি ব্যবহারের প্রস্তাব।

সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি:

কমিশন সুপারিশ করেছে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ সংক্রান্ত ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদগুলো বাদ দেওয়ার।

মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা:

১. মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা একক সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যা আদালতে বলবৎযোগ্য হবে।

২. নতুন অধিকার যেমন খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, ইন্টারনেট, ভোটাধিকার, গোপনীয়তা রক্ষা, ভোক্তা সুরক্ষা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

৩. অধিকারের প্রেক্ষিতে সংবিধানে সংশোধনের মাধ্যমে বৈষম্য নিষিদ্ধকরণ এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম থেকে সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের প্রস্তাব।

আইনসভা:

১. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠনের প্রস্তাব, যার মধ্যে নিম্নকক্ষের ৪০০ আসন থাকবে।

২. রাজনৈতিক দলগুলোকে তরুণ-তরুণীদের ১০% আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে।

সংবিধান সংশোধনী:

সংবিধানের কোনো সংশোধনী উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনুমোদন পেলে, গণভোটে উপস্থাপন করতে হবে।

নির্বাহী বিভাগ:

১. আইনসভার নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থিত ব্যক্তি সরকার গঠন করবেন।

২. রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে কার্যাবলি পরিচালনা করবেন।

জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি):

এনসিসি গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে, যার সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদের স্পিকার এবং প্রধান বিচারপতি অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।

এছাড়া, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বা স্বার্থের বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদনের পূর্বে উভয় কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে অনুমোদন নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।