বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা
হঠাৎ বাংলাদেশে ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে
দেশে সাত দিনের মধ্যে দুইবার ভূমিকম্পের আঘাত এবং গত ৯০ দিনে বাংলাদেশ ও তার আশপাশে ৫০টিরও বেশি মৃদু ও তীব্র ভূমিকম্প হয়েছে। গত ১৫ বছরে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫০টিরও বেশি ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ভূমিকম্প বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হতে পারে।
বিশ্বের ভূমিকম্পপ্রবণ ২০টি শহরের মধ্যে ঢাকা অন্যতম। ফলে, বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে, এই দুর্যোগ মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি কোনো সরকার।
বিশেষজ্ঞরা জানান, এসব ছোট ও মাঝারি ভূমিকম্প মূলত ভবিষ্যতে আরও বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানও এই ঝুঁকির সাথে সম্পর্কিত। বড় ভূমিকম্প হলে ঢাকা ছাড়াও সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ এবং চট্টগ্রামসহ অন্যান্য অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে ৭ জানুয়ারি তিব্বতে ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এই ভূমিকম্পের প্রভাব বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতেও অনুভূত হয়েছে। মূলত এই অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক ফল্ট লাইনের কারণে নিয়মিতভাবে ভূমিকম্প হচ্ছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানায়, বাংলাদেশ ভূকম্পনপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত। সাম্প্রতিক ভূমিকম্পগুলোর তীব্রতা দেশের ভবিষ্যতে বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারি ৬.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছিল আর ১৯১৮ সালে বাংলাদেশের ভেতরে হওয়া একটি বড় ভূমিকম্প ব্যাপক ক্ষতি করেছিল। ৭৫ বছর ধরে বড় ভূমিকম্প না হওয়ায় এখন এটি যে কোনো সময় ঘটতে পারে, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারত ও মিয়ানমার টেকটোনিক প্লেট গেছে। গত শত শত বছর এসব প্লেটে বড় কোনো ভূমিকম্প হয়নি। ফলে এই প্লেটে সঞ্চিত হয়েছে দীর্ঘদিনের শক্তি। হঠাৎই এটি ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে। আর এ মাত্রার ভূমিকম্প হলে লাখ লাখ প্রাণহানির সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে ঢাকা। বুয়েট ও সরকারের একটি যৌথ সমীক্ষায় দেখা যায়, সাড়ে সাত মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে। যেখানে তৈরি হবে সাত কোটি টন কংক্রিটের স্তূপ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন ও ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেন্ট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘৭ মাত্রার ভূমিকম্প যদি সীমান্ত এলাকায় হয় তাহলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বাংলাদেশকে। বিশেষ করে ময়মনসিংহ, রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ক্ষয়ক্ষতি হবে। ঢাকায় ক্ষয়ক্ষতি হবে কারণ ঢাকার ভবনগুলো বেশিরভাগ ঝুঁকিপূর্ণ।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ‘আমাদের দেশের আশপাশ দিয়ে তিনটি টেকটোনিক প্লেট গেছে। যেগুলোর সংযোগস্থল সীমান্তের আশপাশে। আমাদের অবস্থান ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেটে, আমাদের উত্তরে হিমালয় পড়েছে ইউরেশিয়ান প্লেটে আর আমাদের পূর্বে হচ্ছে মিয়ানমার মাইক্রো প্লেট। সবগুরো প্লেটই আমাদের কানেক্টেড এবং সক্রিয়। এগুলোর মুভমেন্ট আছে। প্লেটগুলো প্রতি বছর ৫ সেন্টিমিটার মুভমেন্ট করে। অর্থাৎ, আমার প্রতি বছর ৫ সেন্টিমিটার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মুভমেন্ট করছি। একইভাবে পুরো পৃথিবীও মুভ করছে।’
তিনি বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কাছে শুধু ইক্যুইপমেন্টস আছে। শুধু ইক্যুইপমেন্টস দিয়ে হবে না। কারণ, ভবন মেরামত না করলে ভবন চাপা পড়ে মানুষ মারা যাবেই। এছাড়া গ্যাস-বিদ্যুতের অপরিকল্পিত লাইন ঢাকা শহরে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ।’