প্রস্তুতি সম্পন্ন; আগামীকাল বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৩ AM

বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে আগামীকাল বুধবার (০১ জানুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ)-২০২৫’। এদিন সকাল ১০টায় মেলার উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) পূর্বাচলের মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের বাণিজ্য মেলায় প্রথমবারের মতো অনলাইনে বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্টল/প্যাভিলিয়ন স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় প্রথমবারের মতো ই-টিকেটিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিআরটিসির ডেডিকেটেড বাস সার্ভিসের পাশাপাশি যুক্ত হচ্ছে বিশেষ ছাড়ে উবার সার্ভিস।

এছাড়া মেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের সম্মানার্থে তৈরি করা হয়েছে জুলাই চত্বর ও ছত্রিশ চত্বর। সঙ্গে দেশের তরুণ সমাজকে রপ্তানি বাণিজ্যে উদ্বুদ্ধকরণে তৈরি করা হয়েছে ইয়ুথ প্যাভিলিয়ন।

মেলায় সম্ভাবনাময় সেক্টর/পণ্যভিত্তিক সেমিনার আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এ বছর। বিদেশি উদ্যোক্তা/প্রতিষ্ঠানের সুবিধার্থে থাকছে স্বতন্ত্র সোর্সিং কর্নার, ইলেক্ট্রনিক্স ও ফার্নিচার জোন। বয়সভিত্তিক দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে প্রযুক্তি কর্নার, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য সিটিং কর্নার। শিশুদের নির্মল চিত্তবিনোদনের জন্য মেলায় থাকছে শিশু পার্কও।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, চতুর্থবারের মতো বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পূর্বাচলস্থ বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে। মেলার লে-আউট প্ল্যান অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩৬১টি প্যাভিলিয়ন/স্টল/রেস্টুরেন্ট দেশীয় উৎপাদক-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে শতভাগ স্বচ্ছতায় বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিক্স অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্সস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহ সামগ্রী, চামড়া/আর্টিফিসিয়াল চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ,প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল,টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর ইত্যাদি পণ্য মেলায় প্রদর্শন ও বিক্রয় হবে।

বাংলাদেশ ব্যতীত ৭টি দেশের মোট ১১টি প্রতিষ্ঠান এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো হলো-ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও মালয়েশিয়া।

এক্সিবিশন সেন্টারের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে জুলাই চত্বর, দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে কালচারাল সেন্টার, টেকনোলজি কর্নার, রিক্রিয়েশন কর্নার এবং সেন্টারের উত্তর-পূর্ব (৬ একর) পাশে শিশু পার্ক ও উত্তর-পশ্চিম পাশে ছত্রিশ চত্বর ও নামাজ ঘর স্থাপন করা হয়েছে।

মেলার সার্বিক নিরাপত্তা এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে মেলা প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে। প্রাঙ্গণের বাইরেও নিয়মিত টহল দল থাকবে। নিরাপত্তা অগ্রাধিকার বিবেচনায় মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, প্রবেশ গেট, পার্কিং এরিয়া এবং সংশ্লিষ্ট সব এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে।

এবারের মেলায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। এক্সিবিশন হলে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক আলাদা টয়লেটের পাশাপাশি এক্সিবিশন হলের বাইরেও পর্যাপ্ত সংখ্যক টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মেলায় খাদ্য দ্রব্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ গঠিত টিম মেলা চলাকালীন প্রতিদিন ভেজাল বিরোধী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে।

মেলায় আগত দর্শনার্থীদের জন্য সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও পেশেন্ট কেয়ার এটেনডেন্ট উপস্থিত থেকে ফ্রি প্রাথমিক চিকিৎসা ও চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান করবে।

মেলার থাকবে পর্যাপ্ত কার পার্কিং এর সুবিধা। ৫ শতাধিক গাড়ি পার্কিং সুবিধা সংলগ্ন দ্বিতল কার পার্কিং বিল্ডিং ছাড়াও এক্সিবিশন হলের বাইরে ৬ একর জমিতে পার্কিং এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং এর জন্য মেলায় স্থাপন করা হয়েছে একটি কন্ট্রোল রুম ও দর্শনার্থীদের সব প্রকার তথ্য প্রদানের জন্য একটি তথ্য কেন্দ্র। ব্যাংকিং সার্ভিসের জন্য মেলায় থাকবে পর্যাপ্ত সংখ্যক ব্যাংক বুথ। মা ও শিশুদের জন্য মেলায় থাকবে মা ও শিশু কেন্দ্র। দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য আরামদায়ক ও শোভন চেয়ার/বেঞ্চ, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য সিটিং কর্নার ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা হতে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে (সাপ্তাহিক ছুটির দিন রাত ১০টা পর্যন্ত)।

সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহা. সেলিম উদ্দিন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রহিম খান উপস্থিত ছিলেন।

বাণিজ্য উপদেষ্টার উপস্থিতিতে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় যাত্রী পরিবহনে বিশেষ ছাড় দিতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও অ্যাপ-ভিত্তিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান উবার-এর মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। পরে বাণিজ্য উপদেষ্টা ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় প্রবেশের ই-টিকিটিং অ্যাপের উদ্বোধন করেন।

প্রতিবছরের মতো এবছরও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করছে।

তথ্য: আরটিভি