কবি হেলাল হাফিজ বেঁচে নেই
দ্রোহ আর প্রেমের কবি হেলাল হাফিজ মারা গেছেন। আজ শুক্রবার শাহবাগের সুপার হোম হোস্টেলে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। এখন তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, সুপার হোস্টেলের ওয়াশরুমের দরজা খুলে মৃত অবস্থায় তাকে দেখতে পাওয়া গেছে। শুক্রবার সোয়া ২টার দিকে ওয়াশরুমের দরজা খোলা হয়। তিনি ওয়াশরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন।
কবি হেলাল হাফিজ ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। উত্তাল ষাটের দশক হয়ে ওঠে তার কবিতার উপকরণ। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি তাকে কবিখ্যাতি এনে দেয়। তার কবিতা হয়ে উঠেছিল মিছিলের স্লোগান।
‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ কালজয়ী কবিতার এ লাইন দুটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। পরবর্তীতে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলেন সময়ও কবিতাটি মানুষের মাঝে তুমুল সাড়া জাগায়।
১৯৮৬ সালে প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘যে জ্বলে আগুন জ্বলে’ কবিকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এরপর বইটির ৩৩টির বেশি সংস্করণ বেরিয়েছে।
দীর্ঘসময় নিজেকে অনেকটা আড়ালে সরিয়ে নিয়েছিলেন হেলাল হাফিজ। আড়াই দশক পর ২০১২ সালে তিনি পাঠকদের জন্য আনেন দ্বিতীয় বই ‘কবিতা ৭১’। তৃতীয় এবং সর্বশেষ বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদোনা’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে।
গত ১০ বছর ধরে হেলাল হাফিজ হোটেলেই থাকতেন। মহামারি করোনার আগে থাকতেন সেগুনবাগিচায় কর্ণফুলী হোটেলে। তখন তার জীবন ছিল মূলত প্রেসক্লাবকেন্দ্রীক। সকালের নাস্তা থেকে রাতের খাবার সবই প্রেস ক্লাব ক্যান্টিনেই হতো।
২০২০ সালের মার্চ মাসে দেশে মহামারি শুরু হলে লকডাউনের বিধিনিষেধ শুরু হয়। প্রেস ক্লাব বন্ধ হলে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে কষ্টে পড়ে যান কবি। তখন বড় ভাই দুলাল আবদুল হাফিজ তখন কবিকে নিয়ে গিয়েছিলেন তার ইস্কাটনের বাসায়। কিন্তু পরিস্থিতি একটু ভালো হলে আবার হোটেলে ফিরে যান তিনি।