ফের সংলাপ: প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনী রোডম্যাপ দিতে সরকারকে আহ্বান
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কারে গঠিত কমিশনের বিষয়ে মতামত নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। সে ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার কয়েকটি দলের সঙ্গে বসবে সরকার। আজ ডাক পাওয়া কয়েকটি দলের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বৈঠকে তারা প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনী রোডম্যাপ দিতে সরকারকে আহ্বান জানাবে। এর আগে ৫ অক্টোবর বিএনপি, জামায়াতসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল। সেখানে বিএনপি চেয়েছিল দ্রুত নির্বাচন, জামায়াত চেয়েছিল সংস্কারের পর নির্বাচন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন যমুনায় আজ বেলা আড়াইটা থেকে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে গণফোরাম, এলডিপি, বাংলাদেশ জাসদ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিকে (আন্দালিব)। এ ছাড়া আরও দু-একটি দল থাকতে পারে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে এবারও গত তিন সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না বলে সূত্রে জানা গেছে।
গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে তৃতীয় দফায় বৈঠক করছে। তৃতীয় দফার প্রথম ধাপে ৫ অক্টোবর বিএনপি, জামায়াত, বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছিল। সেই বৈঠকের অ্যাজেন্ডায় সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা ও দুর্গাপূজার নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছিল। কিন্তু তৃতীয় দফার দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে কোনো ধরনের অ্যাজেন্ডা রাখা হয়নি বলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে।
এ বিষয়ে এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, ‘আগের বৈঠকেও (দ্বিতীয় দফার মতবিনিময়) অ্যাজেন্ডার কথা আমাদের বলা হয়নি, এবারও অ্যাজেন্ডা সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি।’
৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সংলাপে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো সরকারকে দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ দিতে দাবি জানিয়েছিল। অন্যদিকে জামায়াতসহ ইসলামপন্থী দলগুলো সংস্কার শেষে নির্বাচনের দাবি করেছিল। আজকের বৈঠকে ডাক পাওয়া গণফোরাম, বাংলাদেশ জাসদসহ প্রায় সব দলই বিএনপি সমমনা। এসব দল বৈঠকে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন করতে সরকারকে তাগিদ দেবে বলে জানিয়েছে। একই সঙ্গে সংখ্যানুপাতিক ভোটেরও বিরোধিতা করবে তারা।
লেবার পার্টি সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিরোধী বলে জানান দলটির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সংখ্যানুপাতিক হলে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। তারা নির্বাচন করে যদি ৩০ শতাংশ ভোট পায় তাহলে ৯০টি আসন তারা পাবে। সে ক্ষেত্রে আমরা মনে করি না, এ বিষয়টি সামনে আনা দরকার।’
১২ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য থাকবে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি নির্বাচন দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।’ আর ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচনী রোডম্যাপ দিতে সরকারকে সুপারিশ করব।’
নির্বাচন ও সংস্কারের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করলে সরকারের অনেক বেশি সময়ের দরকার হবে বলে মনে করেন না মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। তিনি বলেন, ‘সরকারের বিগত আড়াই মাসে দৃশ্যমান ভালো কোনো অর্জন আমাদের চোখে পড়েনি। এখন তাদের বলতে হবে আমরা এ বিষয়গুলোতে সংস্কার করব, আমাদের এতটুকু সময়ের দরকার। একটা টাইমফ্রেম তারা জাতির সামনে তুলে ধরুক, এটা লেবার পার্টি চায়।’
সংলাপে সরকার বক্তব্য শুনবে উল্লেখ বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের বোঝাপড়া বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেব।’
সূত্র: আজকের পত্রিকা