আন্দলনে নিহত ৮৭৫; আহত ৩০ হাজারের বেশি: এইচআরএসএস
গত জুলাই ও আগস্টে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে সরকার পতনের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে চলা লাগাতার কর্মসূচির মাধ্যমে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে কত প্রাণহানি হয়েছে, তার একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)।
সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, গত ১৬ জুলাই থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৮৭৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন এই আন্দোলনে। নিহতদের মধ্যে ৭৭ শতাংশই মারা গেছেন গুলিবিদ্ধ হয়ে। এছাড়া মানবাধিকার সংস্থাটির হিসাবে, এই আন্দোলনে আহতের সংখ্যা ৩০ হাজারেরও বেশি।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সবশেষ তথ্য বিশ্লেষণ করে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে এইচআরএসএস।
প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য দেশের ১২টি জাতীয় দৈনিক, নিজস্ব তথ্য অনুসন্ধানী ইউনিট ও সারা দেশ থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করেছে এইচআরএসএস। গণমাধ্যম, হাসপাতাল ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে যেসব বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে এক হাজার হবে বলে ধারণা সংস্থাটির ।
এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট ৭৭২ জনের মৃত্যুর ধরন সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৯৯ জন বা ৭৭ শতাংশ গুলিতে নিহত হয়েছেন। ৬১ জন (৮ শতাংশ) অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছে। ৮৫ জনকে (১১ শতাংশ) পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। অন্যান্য কারণে মারা গেছেন ২৭ জন (৪ শতাংশ)।
কোন বিভাগে কত নিহত হয়েছেন, সেই পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নিহত ৮৭৫ জনের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক ঢাকা বিভাগে ৫৪০ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রামে ৯১ জন, খুলনায় ৮১ জন, রাজশাহীতে ৬৪ জন, ময়মনসিংহে ৩৮ জন, রংপুরে ২৯ জন, সিলেটে ২০ জন এবং বরিশালে ১৩ জন নিহত হয়েছেন।
এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে নিহত ব্যক্তিদের একাংশের বয়স, পেশা এবং মৃত্যুর কারণও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১৬ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ৩২৭ জন এবং ৪ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (অনেকে সরকার পতন পরবর্তী সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরে মারা যান) ৫৪৮ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৫২ শতাংশই শিক্ষার্থী। নিহতদের মধ্যে ৭৭ শতাংশেরই মৃত্যু হয়েছে গুলিতে। নিহতদের ৫৩ শতাংশই ১৯ থেকে ৩০ বছর বয়সী।
এইচআরএসএস জানায়, নিহত ৮৭৫ জনের মধ্যে ৭৪৩ জনের নাম জানা গেছে। তাদের মধ্যে শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী, সাংবাদিক, পেশাজীবী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, শিশু ও নারীসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থক আছেন। আন্দোলনে কমপক্ষে ১০৭ জন শিশু, ৬ জন সাংবাদিক, ৫১ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং ১৩ জন নারী ও মেয়েশিশু নিহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সারাদেশে থানা (পাঁচ শতাধিক), সরকারি স্থাপনা এবং সংখ্যালঘুদের স্থাপনায় হামলা–ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
নিহত ৮৭৫ জনের মধ্যে ৬১৯ জনের বয়স সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেছে এইচআরএসএস। এই ৬১৯ জনের মধ্যে ১০৭ জন শিশু (১৮ বছরের কম বয়সী) রয়েছে। এছাড়া ১৯ থেকে ৩০ বছর বয়সী বা তরুণ ৩২৭ (৫৩ শতাংশ) জন, ৩১ থেকে ৫০ বছর বয়সী বা মধ্যবয়সী ১৫৮ (২৬ শতাংশ) জন এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সী ২৭ জন (৪ শতাংশ) বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ ৬১৯ জনের মধ্যে ৭০ শতাংশেরই বয়স ৩০ বছরের মধ্যে।
এছাড়া নিহতদের মধ্যে ৩৫২ জনের পেশা সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে এইচআরএসএস। এর মধ্যে শিক্ষার্থী ১৮৪ জন (৫২ শতাংশ), শ্রমজীবী ৭০ জন (২০ শতাংশ), আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ৫১ জন (৫ শতাংশ)।