এবার বেনজিরের গুলশানের ৪ ফ্ল্যাট জব্দ
দুর্নীতির অভিযোগে একে একে সম্পত্তি খোয়াচ্ছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। এবার তার গুলশানের ৪টি ফ্ল্যাট জব্দ করেছে দুদক।
সোমবার (০৮ জুলাই) র্যাংকন আইকন টাওয়ারের ফ্ল্যাটগুলো সিলগালা করে তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ দেওয়া হয়। বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ।
দুর্নীতির অভিযোগে বেনজীরের এই ফ্ল্যাটগুলো জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও ভবনটিতে ঢুকতে দেওয়া হয় না কাউকে।
র্যাংকন আইকন টাওয়ারের ম্যানেজার জসিম উদ্দিনের কাছে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই যে ঢুকতে দিয়েছি। আপনি তো ঢুকেছেন। এন্ট্রি তো দিয়েছি। আপনি একটু বসেন। ওনাদের কাজ শেষ হলে ওনারা আপনাদের ব্রিফ করবেন। আমাকে যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবেই আপনাদের বলছি।’
জানা যায়, সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর, তাঁর স্ত্রী ও মেয়েদের নামে কেনা চারটি ফ্ল্যাটের মোট আয়তন নয় হাজার বর্গফুট। এগুলোকে নকশা করে এক দরজার ভেতরে আনা হয়েছে। এখানে মাঝে মধ্যে থাকতেন সাবেক আইজিপি। সোমবার ফ্ল্যাটগুলো সিলগালা করে দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাফে মোহাম্মদ ছড়া বলেন, ‘ক্রোক করা ফ্ল্যাটের ভেতরে কি আছে, সেটা তালিকাভুক্তির জন্য আমাদের পিডব্লিউডির একজন ইঞ্জিনিয়ার আছেন। আমরা প্রত্যেকে মিলে বসে একটি তালিকা তৈরি করেছি। এখানে চারটি ফ্ল্যাট আছে, তবে এগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে একসাথে একটি পরিবার এটা ব্যবহার করতে পারবে।’
জব্দ করেই ফ্ল্যাটের তত্ত্বাবধায়ক করা হয়েছে দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদকে। তিনি জানান, ফ্ল্যাটে থাকা জিনিসপত্রের তালিকা জমা দেওয়া হবে কমিশনে।
এরই মধ্যে ঐ ফ্ল্যাটের বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
সম্প্রতি দৈনিক কালের কণ্ঠের এক প্রতিবেদনে সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের বিপুল সম্পদের কথা উঠে আসলে দেশজুড়ে আলোড়ন তৈরি হয়। প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, পাঁচ তারকা হোটেলের শেয়ার, গাজীপুর, কক্সবাজার, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে শত শত বিঘা জমির মালিকানা রয়েছে।
এ খবর প্রকাশ হওয়ার পর সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের বিপুল অবৈধ সম্পদের অভিযোগ অনুসন্ধান করতে দুদকের কাছে আবেদন করেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। এর পরপরই বেনজীর আহমেদের বিপুল অবৈধ সম্পত্তির অভিযোগের অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী সালাউদ্দিন রিগ্যান।
এই দুই ঘটনার পর গত ১৮ এপ্রিল দুদকের সভায় সাবেক এই পুলিশ প্রধানের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর এ জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করে দুদক। কমিটির সদস্যরা হলেন, দুদক উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন। এরই মধ্যে বেনজীর ও তাঁর পরিবারের জাতীয় পরিচয়পত্র, আয়কর নথি ও কোম্পানির কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে দুদক।
এরই মধ্যে আদালতের আদেশে দেশে বেনজীর ও পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সব সম্পদ ক্রোক করেছে সরকার। অবশ্য এরই মধ্যে স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে দেশ ছেড়েছেন সাবেক এই পুলিশ প্রধান। তবে যাওয়ার আগে ব্যাংক থেকে প্রায় শত কোটি টাকা তুলে নেন তিনি। বেনজীরের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।