নিজস্ব আয় থেকে প্লেন কেনার ঋণ শোধ করছে বাংলাদেশ বিমান
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থা হলো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সংস্থাটি নিজেদের আয় থেকে উড়োজাহাজ কেনার ঋণ পরিশোধ করে চলেছে। এরই মধ্যে ২০১১ সালের চুক্তি অনুযায়ী বোয়িং কোম্পানি থেকে ১২টি ও ডি হ্যাভিল্যান্ড কোম্পানি থেকে দুটি এয়ারক্রাফট কেনার ঋণের আসল ও সুদসহ ১ হাজার ৫৭০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি তিনটি বোয়িং এয়ারক্রাফটের সম্পূর্ণ ঋণ নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ করেছে বিমান।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
বিমান কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু এয়ারক্রাফট কেনার ঋণের টাকাই নয়, করোনাকালে চলতি মূলধন বাবদ সরকার প্রদত্ত আর্থিক প্রণোদনা হিসেবে ৭৮৮ কোটি টাকা নেয় বিমান। তবে সংকট কেটে যাওয়ার পর ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক হলে প্রণোদনা ঋণের আসল ও সুদ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পরিশোধ করা সম্ভব হয়। তারা আরও জানান, রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে শফিউল আজিম দায়িত্ব নেওয়ায় ঘুরে দাঁড়াতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। নিয়োগ ও কেনাকাটসহ নানা খাতে শৃঙ্খলা ফিরতে শুরু করে। অনিয়ম দূর করে দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের কারণে আর্থিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে বিমান।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. আল মাসুদ খান বলেন, নিজ আয় থেকে বিমান তার এয়ারক্রাফট কেনার ঋণ শোধ করছে। এটা বিমানের আর্থিক সক্ষমতার নজির। স্মার্ট এয়ারলাইন্স হওয়ার পথে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বিমান। কিন্তু এ অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে একটি বিশেষ মহল এয়ারলাইন্সের আর্থিক সক্ষমতা এবং ব্যবসায়িক অগ্রগতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
বিমান সূত্র জানায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বোয়িং কোম্পানির ব্র্যান্ড নিউ দুটি ৭৩৭-৮০০, চারটি ৭৭৭-৩০০ই আর, ছয়টি ৭৮৭ ড্রিমলাইনার এবং ডি হ্যাভিল্যান্ড কোম্পানির দুটি ড্যাস-৮ কিউ ৪০০ উড়োজাহাজ কেনার জন্য ২০১১ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ২ হাজার ৯৩ মিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়। তবে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সে ঋণের আসল ও সুদ বাবদ ১ হাজার ৫৭০ মিলিয়ন ডলার কিস্তির তালিকা অনুযায়ী কোনো বিলম্ব ছাড়াই পরিশোধ করতে সক্ষম হয়। তা ছাড়া ২০২২ সালে একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এবং পরের বছর দুটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ উড়োজাহাজের সম্পূর্ণ ঋণ সফলতার সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ করা হয়। এখন এ তিনটির মালিকানা স্থানান্তর প্রক্রিয়াধীন।
ব্যবস্থাপক আরও জানান, বিমানের বহরে লিজে থাকা দুটি ড্যাশ-৮-৩০০ এবং দুটি ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজের লিজ শেষ হওয়ার পর নিজস্ব তহবিল ব্যবহার করেই ওই চারটি উড়োজাহাজ কিনতে সক্ষম হয়েছে। আগামী বছর আরও দুটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ উড়োজাহাজের সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ শেষ হবে।
কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে বিমানের বহরে নিজস্ব উড়োজাহাজ রয়েছে ১৯টি। কোনো ধরনের সরকারি ভর্তুকি ছাড়াই নিজস্ব আয় থেকে পরিচালনা ব্যয় নির্বাহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি উড়োজাহাজ কেনার মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে।
এদিকে সরকার আরও ১০টি এয়ারবাস কিনবে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান। মঙ্গলবার (৭ মে) সচিবালয়ে নিজ দফতরে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যানি ম্যারি ট্রেভেলেইনের সাথে বৈঠকের পর তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, বেসামরিক বিমান খাতে কী করা যায়, সেটাই ছিল আমাদের আলোচনার মূলকেন্দ্র। তারা আমাদের নতুন বিমানবন্দর দেখেছেন। তারা বুঝতে পেরেছেন যে এখানে অনেক কাজ হবে। ইউরোপে তারা এয়ারবাস বানায়, আমাদের বোয়িং আছে। আমরা এয়ারবাস কেনার কথাও ভাবছি।
তথ্যসূত্র: আজকের পত্রিকা, কালবেলা