ফারাক্কা বাঁধের কারণে উত্তরাঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত ২ কোটি মানুষ ও ৫৪ নদী
বাংলাদেশের মরণফাঁদ বলা হয় ফারাক্কা বাঁধকে। ১৯৭৫ সালে নির্মিত হওয়া এই বাঁধের প্রভাবে দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের অন্যতম প্রধান নদী পদ্মায় শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে যাচ্ছে। এতে পদ্মার অববাহিকায় থাকা ৫৪টি নদী হুমকির মুখে পড়েছে। এমন পরিস্থিতির জন্য কূটনৈতিক দুর্বলতাকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, এতে এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
১৯৬১ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয় ফারাক্কা বাঁধের। ভারতে ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার পর শুষ্ক মৌসুমে পদ্মায় পানি সংকট দেখা দেয়। ১৯৭৭ সালে গঙ্গার পানির চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এর সমাধান খোঁজা হয়। সেখানে ৮০ ভাগ পানি পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের, ছিল গ্যারেন্টি ক্লজ। তবে ১৯৮২ সালে বাদ দেওয়া হয় গ্যারেন্টি ক্লজ। সবশেষ ১৯৯৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা চুক্তিতেও তা বাদ পড়ে। চুক্তি অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ১০ দিন পর পর ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে উভয় দেশ।
তবে বাঁধ দিয়ে আর খাল কেটে ভারত পানি প্রত্যাহার করায় মরতে বসেছে পদ্মা, একই সাথে নদী অববাহিকার ৫৪টি নদী হুমকির মুখে পড়েছে বলে উল্লেক করেছেন গবেষকেরা।
নদী গবেষক মাহাবুব সিদ্দীকী বলেন, ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে আর খাল কেটে ভারত পানি প্রত্যাহার করায় উত্তরাঞ্চলের প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেই সঙ্গে পদ্মার অববাহিকায় থাকা ৫৪টি নদী হুমকির মুখে পড়েছে। এ ছাড়া পরিকল্পনার অভাবেও অনেক নদীর এখন খারাপ অবস্থা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, চুক্তি অনুযায়ী পানি পেলেও পদ্মার মতো বিশাল নদীর জন্য তা সামান্য। আর পরিবেশবিদেরা বলছেন, এর জন্য দায়ী কূটনৈতিক দুর্বলতা।
এক সময়ের উত্তাল পদ্মা এখন পানিশূন্য। এর সঙ্গে যুক্ত ২৭টি শাখা নদী এখন অস্তিত্ব সংকটে। ২০২৫ সালে শেষ হচ্ছে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা চুক্তি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মাসহ যৌথ নদী বাচাঁতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
রাজশাহী পানি বিজ্ঞান উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক জানান, পদ্মার মতো বড় নদীতে মাত্র ৩৫ হাজার কিউসেক পানি খুবই নগণ্য।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সাবরিনা নাজ বলেন, কূটনৈতিক দক্ষতার অভাবেই পদ্মার প্রবাহ দিন দিন ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে যাচ্ছে।