আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস
আজ ২৬ মার্চ, ৫৪তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনের প্রথম প্রহরে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর ওই ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়।
স্বাধীনতা ঘোষণার এই মাহেন্দ্রক্ষণের আগ মুহূর্তে; ২৫শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালির ওপর অতর্কিত গণহত্যা অভিযান ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সেই অভিযানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, রমনা কালীমন্দিরসহ বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা চালায়। শুধু ঢাকায়ই অন্তত ৭ হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয়।
২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে একটি ভূখণ্ডের, যার নাম বাংলাদেশ।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকাসহ সারাদেশে প্রত্যুষে ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বিদেশি কূটনীতিকরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণীস্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
এ উপলক্ষে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা এবং ঢাকা শহরের ভবনগুলোয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলোয় আলোকসজ্জা সজ্জিত করা হয়েছে।
মহাস স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসটি সরকারি ছুটির দিন। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। এ উপলক্ষে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনসহ দেশের ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। উল্টো পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকদের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তৎকালীন ইপিআরের ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে ঘোষণাটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
সেই সময় বাস্তবতা ও নিরাপত্তা জনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণা নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি ছিল এরকম–‘ইহাই হয়তো আমাদের শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছেন, যার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ, ১৯৭১।’
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত ‘‘বাংলাদেশ ডকুমেন্টস’’-এ ওই ঘোষণার পূর্ণ বিবরণ প্রকাশিত হয়েছিল। এতে বলা হয়, ‘এই-ই হয়তো আপনাদের জন্য আমার শেষ বাণী হতে পারে। আজকে থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি, যে যেখানেই থাকুন, যে অবস্থাতেই থাকুন এবং হাতে যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। ততদিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান-যতদিন না দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর শেষ সৈনিকটি বাংলাদেশের মাটি থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছে এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হচ্ছে।’