ছাত্রদলের এজিএস প্রার্থীর আহ্বান
-1131121.jpg?v=1.1)
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন নিয়ে গত দুইদিন ধরে নানা নাটকীয়তা চলছে। ভোট গণনা শুরু হওয়ার ৪০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা হয়নি। এরই মধ্যে নির্বাচনে প্রকাশ্য অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ থাকলেও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে রায় মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের নারী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী আঞ্জুমান ইকরা।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে আঞ্জুমান ইকরা বলেন, নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের উর্ধ্বে সুষ্ঠু ভোটের জন্য আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে দায়বদ্ধ ছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের প্রকাশ্য অনিয়ম, কারচুপির পরও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এই রায় আমাদেরকে মেনে নিতে হবে।
তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিজেদের ভুলগুলো পুনর্বিবেচনা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করার অনুরোধ জানান।
তিনি আরও বলেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল জাকসু নির্বাচনে ভরসার জায়গা থেকে আমাকে এজিএস প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ করে দিয়েছে, এজন্য আমি চিরকৃতজ্ঞ। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দায়িত্বশীলদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে নিজেদের ভুলগুলো পুনর্বিবেচনা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করা। আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে একটি নতুন ক্যাম্পাস গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ।
একই ভাবে ফেসবুক পোস্ট করেন জাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া।
তিনি লেখেন, ‘প্রিয় রাজনৈতিক সতীর্থরা, বিগত আওয়ামী শাসন গণতন্ত্র ও রাজনীতির যে ব্যাপক ক্ষতি করেছে তার সুদীর্ঘ প্রভাব থেকে আমরা এখনো বেরিয়ে আসতে পারিনি। ১৬টা বছর প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় যে ভয়াবহ প্রতিকূলতা ও চাপের মুখোমুখি আমরা হয়েছি, গুছিয়ে উঠতে সময় লাগাটা স্বাভাবিক।
জাবিতে ৩৩ বছর পরের এ নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি হয়েছে। আগে পরে বেশ কিছু ঘটনা হয়েছে যেগুলো শোকজের দাবি রাখে। কিন্তু সার্বিকভাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের একজন কর্মী হিসেবে আমি মনে করি, জাকসু নির্বাচন ২০২৫ একচেটিয়াভাবে প্রত্যাখ্যান করাটা আমাদের গণতান্ত্রিক চর্চার সাথে যায় না, বিশেষত যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা এটাকে ব্যর্থ নির্বাচন মনে করছে না এবং আমরাও আমাদের ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতাগুলো জানি।
আত্মশুদ্ধির প্রথম ধাপ আত্ম-উপলদ্ধি। বর্তমান প্রজন্ম দায় চাপানোর রাজনীতি প্রচণ্ড ঘৃণা করে। সুতরাং এই প্রজন্মের আস্থা অর্জনের জন্য সত্যিকার কাজ করতে হবে। অনেক না-পাওয়া আমাদের মধ্যে গ্রুপিং তৈরি করে একতাকে নষ্ট করেছে, বৃহত্তর স্বার্থকে ব্যক্তিস্বার্থের ওপরে আমরা রাখতে ভুলে গেছি। কিন্তু সময় শেষ হয়ে যায়নি। আমাদের লিডার তার স্বপ্নকে আমাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন, আমাদেরকে তো সেটা ধারণ করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে তাই না?
আমার মানুষরা মেধাবী, আমাদের মাথার ওপরে অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ সিনিয়ররা আছেন। তাই আমি আশাবাদী যে আত্মসমালোচনা করে, ইতিবাচক পরিবর্তন দিয়ে জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও ভালোবাসা আবারও জিতে নেওয়াটা আমাদের জন্য কঠিন হবে না। শহীদ জিয়ার আদর্শে ঘৃণার রাজনীতির স্থান নেই, আমাদেরকে শুদ্ধতার রাজনীতি করতে হবে।
নির্বাচনের রায় যাই হোক, আমরা প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তব করব। আজ যে রায় আসবে, আসুন সেটাকে নিরপেক্ষ চোখে দেখি। কখনো কখনো এগিয়ে যাওয়ার আগে এককদম পিছিয়ে আসতে হয়।
আমি স্বতন্ত্র প্রার্থিতা থেকে সরে আসার আগে একটা ঐক্যের ডাক দিয়েছিলাম। সম্প্রীতি, সাংস্কৃতিক মুক্তি আর স্বস্তির জাহাঙ্গীরনগরের জন্য, বাংলাদেশের জন্য আসুন আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হই। ইতি, আপনাদের অনন্যা।
এদিকে, শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনে তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলন করে অনিয়মের দায় স্বীকার করে জাকসু নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার।
অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, নির্বাচনে লেভেলে প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়নি, বিভিন্ন অনিয়ম হয়েছে। অনেক অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাকে বিভিন্নভাবে চাপ দেয়া হয়েছে যাতে আমি পদত্যাগ না করি। গতকাল থেকেই আমার ওপর চাপ ছিল, তবুও আমি পদত্যাগ করছি।
এর আগে জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে কারচুপিসহ বেশ কয়েকটি কারণ দেখিয়ে ভোট বর্জন করে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল করে।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাত সোয়া ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিলটি নতুন কলাভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে জাকসু নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের সামনের সড়ক হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।