বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ড: অনুমোদন তদারকিতে সরকারি ১০ সংস্থার দায়
সম্প্রতি রাজধানী বেইলি রোডে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডের পর স্থাপনা ও রেস্তোরাঁ ব্যবসার অনুমোদন ও তদারকিতে কমপক্ষে সরকারের দশটি সংস্থা সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কেবলমাত্র নকশা অনুমোদন করে থাকে। এরপর পর্যায়ক্রমে রেস্তোরাঁ ব্যবসায় ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন, তিতাস, ওয়াসা, নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, কলকারখান পরিদর্শন অধিদপ্তর, ডিপিডিসিসহ মোট ১০টি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। রাজধানীর রেস্তোরাঁগুলোতে রাজউকের বাণিজ্যিক অনুমোদন দেখেই উল্লিখিত সংস্থাগুলো তাদের অনুমোদন দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে একই ভবনে একাধিক রেস্তোরাঁ পরিচালনার বিষয়ে কারিগরি দিক খতিয়ে দেখার কথা থাকলেও এসব দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মূলত আর্থিক সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
সিটিজেন জার্নালের অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বেইলি রোডের যে ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সেখানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ, হোল্ডিং ট্যাক্স ও কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের একটি অংশ নিয়মিত রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষকে অনুমোদনের হালনাগাদ কপি সরবরাহ করেছেন। সেখানে নিয়ম অনুযায়ী রাজউকের অনুমোদনকৃত নকশায় রেস্তোরাঁর বিষয়টি উল্লেখ না থাকলে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি দেওয়ার কথা নয়। কিন্তু বেইলি রোডসহ রাজধানীর প্রায় সব রেস্তোরাঁগুলোতেই সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো এভাবে রেস্তোরাঁ পরিচালনার অনুমতি দিয়ে যাচ্ছেন। এ অনুমোদনের সাথে সরকারি দশটি সংস্থা জড়িত থাকলেও ঘুরেফিরে সাধারণ মানুষের মুখে শুধু রাজউকের নামই উঠে আসে। কিন্তু বাংলাদেশ হোটেল-রেস্তোরাঁ আইন অনুযায়ী ৩০ আসনের বেশি হলেই ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি অনাপত্তি প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের পক্ষে একজন সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তা বিধিমতে সবকিছু যাচাই-বাছাই করে এ অনুমোদন সনদ দিয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে গতকাল নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন ও প্ল্যানার্স ইনস্টিটিউটের একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রেস্তোরাঁ অনুমোদন ও তদারকির বিষয়টি উঠে আসে। সেখানে নগরবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, “শহরে একটি রেস্তোরাঁ পরিচালনা করতে গেলে কমপক্ষে ১০টি সংস্থার অনুমোদন প্রয়োজন হয়। ফলে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আইনগতভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত এসব সংস্থা কোনভাবেই এর দায় এড়াতে পারেন না।”