শিশুপার্কের ৬০৩ কোটি টাকার প্রকল্প: সেই প্রকৌশলী আনিছুর পাচ্ছেন পিডি’র দায়িত্ব
১৯৭৯ সালে যাত্রা শুরু হওয়া শাহবাগ শিশুপার্কটি ঢাকার প্রথম সরকারি শিশুপার্ক। এ শিশুপার্কটির দেখভাল করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ঢাদসিক)। নতুন করে পার্কটির উন্নয়নে প্রায় ৬০৩ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। কিন্তু এ পার্কটি গত দুই দশক যাদের হাত ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল তাদেরকেই দেওয়া হচ্ছে এ বিশাল আকারের প্রকল্পের দায়িত্ব। নতুন এ প্রকল্পের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন ঢাদসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিছুর রহমান। অথচ যান্ত্রিক বিভাগের দায়িত্বে থাকা এ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে যানবাহন কেনাকাটা, মেরামত ও শিশু পার্ক রক্ষণাবেক্ষণের নামে শত শত কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ সবার মুখে মুখে। ইতোমধ্যে ঢাদসিকের পার্ক উন্নয়নের এ প্রকল্পের পিডি হতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় লিয়াঁজো করে যাচ্ছেন প্রকৌশলী আনিছুর রহমান।
ঢাদসিকের সূত্র জানায়, শিশুপার্কে আধুনিক রাইড বসানোর জন্য ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাদসিকের বোর্ড সভায় ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশুপার্ক’ নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ৬০৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার এই প্রকল্প সম্প্রতি একনেকে পাস হয়েছে। যেখানে প্রকল্পের শুরু ২০২৩ সালের জুলাই এবং ২০২৬ সালের জুনে সমাপ্ত হবে। ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার নিয়োগের কাজটি সামনে রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ১৫টি অত্যাধুনিক রাইড, সুপার এয়ার রেস, টি কাপ ৯, ফ্লাইং ক্যাসেল, মিনি কোস্টার, বাম্পার কার, ম্যাজিক বাইক, সুপার হ্যাপি সুইং, মেরি-গো-রাউন্ড ও ওয়াটার মেনিয়া কেনা হবে। যেহেতু এসব খেলাধুলা সরঞ্জাম বাংলাদেশে একটু দুর্লভ তাই বিদেশ থেকে ক্রয় করার ক্ষেত্রে শুভঙ্করের ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
যান্ত্রিক বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিছুর রহমান এ প্রকল্পের দায়িত্ব পাচ্ছেন জানিয়ে ঢাদসিকের একাধিক প্রকৌশলী বলেন, বিএনপি সমর্থিত সাবেক একজন মেয়রের ঘনিষ্ঠ হিসেবে আনিছুর রহমানকে সবাই চিনেন। এ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে গত ১৫-২০ বছরে ঢাদসিকিতে যানবাহন ক্রয়, সংরক্ষণ-মেরামত ও শিশুপার্কের রক্ষণাবেক্ষণের নামে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিএনপিপন্থী ঠিকাদার ও আত্মীয়স্বজনের নামে লাইসেন্স করে মূলত তিনি নিজেই ঠিকাদারী কার্যক্রম করে থাকেন। তবে বর্তমান মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর অনিয়মের বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করলে চাপে পড়ে যান এ প্রকৌশলী। প্রকৌশল বিভাগ থেকে অভ্যন্তরীণ তদন্তে বেশ কিছু বিষয় উঠে আসে। এসব অনিয়ম কৃর্তৃপক্ষের কাছে যারা তুলে ধরেছেন সেসব প্রকৌশলী-কর্মকর্তারা আনিছুর রহমানের রোষাণলে পড়েন। এবার শিশুপার্কের প্রকল্পের দায়িত্ব পেতে মন্ত্রণালয়ে বেশ কিছুদিন ধরে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে তিনি ৬০৩ কোটি টাকার এ প্রকল্পের পিডি’র পদটি বাগিয়ে নেবেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে প্রকৌশলী আনিছুর রহমানের ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।