বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার বদ্ধপরিকর : স্থানীয় সরকার মন্ত্রী
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির প্রয়োগ সংক্রান্ত এক কর্মশালায় বক্তারা বলেছেন, বায়ু দূষণে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রতি বছর ৮০ হাজার মানুষ মারা যায়। আর এই কারণে বছরে জিডিপির ক্ষতি হয় শতকরা ৮ ভাগ। বায়ু দূষণের জন্য ৩০ ভাগ দায়ী করা হয় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতকে। বলা হয় ভারত থেকে উম্মুক্ত আকাশ বেয়ে বাংলাদেশের এসব দূষিত বাতাস দেশের বাতাসকে দূষিত করছে। তাছাড়াও স্থানীয় ইটভাটা, উম্মুক্ত স্থানে জ্বালানী,উম্মুক্ত ময়লা আবর্জনা, ট্রাকে উম্মুক্ত ভাবে মাটি বালি পরিবহন, নির্মাণযজ্ঞ, তাই বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিত ভাবে সকল সংস্থা, জনপ্রতিনিধির সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয় বক্তাদের বক্তব্যে। তারা বলেছেন, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নিয়মিত তদারকি, মনিটরিং, সমন্বয় হওয়া জরুরি। একই সঙ্গে নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় স্থানীয় সংস্থা সমূহের মধ্যে আন্ত:সমন্বয় থাকলে নগরবাসির স্বস্থি আসবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে এই কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, পরিবেশ,বন ও জলবায়ু বায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড.ফারহিনা আহমেদ, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি সমন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আলী হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ এ শওকত চৌধুরী, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা বি.জে মনিরুল ইসলাম, পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক ড. জিয়াউল হক,আমিরুল ইসলাম, ড.আব্দুস সালাম, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মতিউর রহমান, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম এর সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ভোরের আকাশ পত্রিকার উপাদেষ্টা সম্পাদক মোতাহার হোসেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতের প্রধান প্রকৌশলী এম এ আক্তার হোসেন, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিন এ খান ,উপসচিব আমিনূল এহসান প্রমূখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকের বদলে যাওয়া বাংলাদেশের যে চিত্র তা সম্ভব হয়েছে শিল্পায়নের ফলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য। এতে মানুষের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা হয়েছে এবং নগরায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য যেকোন উন্নত দেশের মতোই আমাদের দেশেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে নানা রকম পরিবেশগত দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে প্রথম থেকেই যদি আমরা আমাদের পরিবেশ দূষণের বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তাহলে আমাদের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে।
তিনি আজ রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে ঢাকায় হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে করনীয় শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের শোষণ বঞ্চনা থেকে মুক্ত করে একটি মর্যাদাবান রাষ্ট্র হিসাবে গড়ার লক্ষ্যে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। এক সময় বাংলাদেশকে "তলাবিহীন ঝুড়ি" বলে অপমান করা হলেও বর্তমানে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে বাংলাদেশ সারা পৃথিবীর বুকে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সারা পৃথিবীর বুকে এক ধরনের আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, যে পাকিস্তান থেকে জাতির পিতা স্বাধীনতার মাধ্যমে আমাদেরকে মুক্ত করেছিলেন আজকে আর্থ-সামাজিক সব ক্ষেত্রেই আমরা পাকিস্তানের থেকে অনেক এগিয়ে আছি। এমনকি প্রতিবেশী অনেক দেশের থেকেও সামাজিক অর্থনৈতিক সূচকে আমাদের অগ্রগতি সন্তোষজনক।
তিনি আরো বলেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতির সাথে সাথে পরিবেশের বিষয়গুলো আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে।
মোঃ তাজুল ইসলাম এ সময় বলেন, বাতাস এমন একটি মাধ্যম যা ধনী গরীব সবার স্বাস্থ্যের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। বায়ু দূষণের উপাদান সমূহ যেমন- বস্তুকণা, সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড কার্বন, মনোক্সাইডসহ বিভিন্ন দূষণের পরিমাপ করে সেসব দূষণ প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি এ সময় আজকের এই কনসালটেশনের মাধ্যমে ঢাকাসহ সারাদেশে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে করনীয় একটি পথ পরিক্রমা পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ সময় মন্ত্রী আন্ত সীমান্ত দূষণ দেশের বায়ু দূষণের মাত্রা কে বাড়িয়ে দিচ্ছেও বলে জানান।
মন্ত্রী বলেন, বায়ু দূষণের উৎস ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাদির উপর বহুবিধ অংশীজন জড়িত। সেজন্য সকল অংশীজনের সক্রিয় অংশগ্রহণ ব্যতীত এ দূষণ নিয়ন্ত্রণের কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়।
গতকাল সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী বক্তব্য রাখছিলেন। তিনি বলেন, ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে যে ধরনের কর্মযজ্ঞ দরকার সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে যে কর্মযজ্ঞের কারণে কিছুটা বয়ুদূষণ হচ্ছে। তবে টেকসই উন্নয়নে সরকার পরিবেশ, প্রতিবেশ, প্রকৃতি, বায়ুমান বজায় রেখেই করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। আজকের আয়োজন সে ধরেনর ভবিষ্য’ কর্মপহ্না নির্দাণের সহায়ক বলে মন্তব্য মন্ত্রীর।
পরিবেশ, বন, ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড.ফারহিনা আহমেদ বলেন, বছরে সাড়ে ১৩ কোটি টান মাটি ইটভাটায় ব্যবহার হয়। এতে পরিবেশ ক্ষতির পাশাপাশি বর্জ্য পোড়ানোর কারণে ১৮ ভাগ এবং ইটভাটায় ১১ ভাগ এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ যানবাহনের ব্যবহারেও বায়ু দূষণ করে। বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে যনবাহন পরীক্ষার জন্য বিআরটিএতে ৪টি পরীক্ষাগার স্থান করা হয়েছে। পাশাপাশি উম্মুক্ত সোলণার কুকার স্থাপানের কাজ চলমান রয়েছে। এসব কাজ সম্পন্ন হলে অনেকাংশে বায়ুর মান উন্নীত হবে।
অপর বিশেষ অতিথি বিজ্ঞান ও তথ্যৗ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আলী হোসেন বলেন, বিজ্ঞাপন প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে বায়ু দূষণ,পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রননেও কাজ করছে। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যৎ কেন্দ্র সম্পুর্ণরুপে পরিবেশ, প্রকৃতি এবং স্থানীয় ভাবে বায়ু দূষণ মুক্ত ভাবেই স্থাপন, বিদ্যৎ উৎপাদন, বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, উন্নত বিশ্ব বায়ু দূষণ, পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু ঝুঁকির জন্য দায়ী অথচ স্থনীয় ভাবে আমাদের ভূূমিকা নগন্য। আর এসব যন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণে উন্নত বিশ্ব প্রযুক্তি হস্তান্তরের নামে যাতে বাণিজ্য করতে না পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখা দরাকার।