সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠকে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩৬ PM

১৫ অক্টোবর জুলাই সনদে স্বাক্ষর হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ১৭ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে এখন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে আজ বুধবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা ছয়টায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর আগে কমিশনের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তিনিই।

বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার মুখ‍্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

৬টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। আগামী শুক্রবার এই সনদ সই হওয়ার কথা। গতকাল মঙ্গলবার রাতে সনদের চূড়ান্ত অনুলিপি দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি। এ বিষয়ে কমিশন আলাদা সুপারিশ দেওয়ার কথা। কিন্তু সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সনদ বাস্তবায়নে গণভোট করার বিষয়ে একমত হলেও ভোটের দিন ও পথ-পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা আছে। কোনো কোনো দল সনদে সই করার আগে বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে নিশ্চয়তা চায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার রাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সেখানে দলটির পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান তুলে ধরা হয়। ‘সংবিধান আদেশ’ জারির মাধ্যমে সংস্কারপ্রক্রিয়া আগানো না হলে এনসিপি সনদে সই করবে না বলে ওই বৈঠকে জানানো হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এনসিপি বলছে, তারা মনে করে, এর আগে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সময় তারা ছাড় দিয়েছে। এবার আর ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারা সংস্কার, বিশেষ করে সংবিধান সংস্কার প্রশ্নে নতুন করে পুরো আলোচনা শুরু করার পক্ষে।

এদিকে চূড়ান্ত করা জুলাই সনদে বাস্তবায়নের পন্থা উল্লেখ না থাকায় এই সনদে জামায়াতে ইসলামী সই করবে কি না, তা নিয়েও সংশয় আছে। তবে এ বিষয়ে দলটি এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি। আজ রাতে এ নিয়ে দলটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে বলে দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, ‘আমরা সনদের চূড়ান্ত কপিটা পেয়েছি আজ সকালে। গরমিল থাকলে আমরা জানাব। যতটুকুতে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে, সেগুলো যদি সনদে উল্লেখ থাকে, অবশ্যই আমরা সই করব। তবে যেটা শুনছি, এই সনদ নিয়ে নানামুখী অপতৎপরতা আছে।’

এ ছাড়া বামপন্থী একাধিক দলেরও সনদে সই না করার ইঙ্গিত আছে। অন্যদিকে বিএনপি সনদের অঙ্গীকার অংশে একটি ধারা যুক্ত করার প্রস্তাব করেছিল। কমিশন সেটা করেনি।

৬টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এর খসড়া চূড়ান্ত হলেও বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। এ কারণে আটকে আছে জুলাই সনদ।

গত ৩১ জুলাই সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পরে ঐকমত্য কমিশন সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলো ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করে। ৯ অক্টোবর এই আলোচনা শেষ হয়। আলোচনায় গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য হয়। কিন্তু গণভোটের ভিত্তি, সময় ও পথ-পদ্ধতি নিয়ে দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে মতভিন্নতা আছে।

৯ অক্টোবর দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় কমিশন জানিয়েছিল, বিশেষজ্ঞ ও দলগুলোর মতামত সমন্বয় করে কমিশন সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারকে সুপারিশ করবে। এরপর বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সঙ্গে সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে মতপার্থক্য কমাতে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করে কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গণভোটের ভিত্তি কী হবে, গণভোট কি সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে নাকি আগে, গণভোটে কী কী প্রশ্ন থাকবে—এসব বিষয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা এখনো কাটেনি।

ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, আজ সন্ধ্যার বৈঠকে দলগুলো সনদে সই করবে কি না, সে বিষয়ে এবং প্রয়োজনে সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে আবার আলোচনা হবে। এ আলোচনা বিটিভি নিউজে সরাসরি সম্প্রচার করার কথা আছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, আজ সন্ধ্যায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠক হবে। এর আগে কমিশন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবে।