নির্বাচনে কঠোর হচ্ছে আচরণবিধি

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:১৩ AM

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য আচরণবিধি সংশোধন করে চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সংশোধিত বিধিমালা আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারে পোস্টার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ ১৬ ফুট আয়তনের বিলবোর্ড ব্যবহার করে প্রচার চালানোর অনুমতি থাকবে। প্রতি আসনে সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের ঘটনায় শাস্তি বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংশোধিত বিধিমালায় প্রার্থিতা বাতিলের বিধান যুক্ত করা হয়েছে এবং জরিমানার পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দেড় লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আগের ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

সংশোধিত আচরণ বিধিমালায় আগের বেশির ভাগ বিধান বহাল থাকলেও নতুন কয়েকটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। বিদ্যমান বিধিমালায় ১৯টি ধারা থাকলেও প্রস্তাবিত নতুন বিধিমালায় ৩১টি ধারা রাখা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা মনে করছেন, পোস্টার নিষিদ্ধ হওয়ায় নির্বাচনী আমেজ কিছুটা কমে যেতে পারে এবং বিলবোর্ড ব্যবহারের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে, যা প্রার্থীদের জন্য ভোগান্তির কারণ হতে পারে।

সংশোধিত বিধিমালায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের সুযোগ রাখা হলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে কোনো ধরনের কনটেন্ট তৈরি ও প্রচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারসামগ্রীতে পলিথিন ও রেকসিনের ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের তালিকায় এবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা, সমমর্যাদার ব্যক্তি এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের। এই শ্রেণির ব্যক্তিদের নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রার্থীরা কোনো প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা সমিতি থেকে সংবর্ধনা নিতে পারবেন না।

নির্বাচনী প্রচার ও ভোটগ্রহণের সময় ড্রোন, কোয়াডকপ্টার বা এ জাতীয় যন্ত্র ব্যবহারের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

প্রার্থী বা তার নির্বাচনী এজেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে চাইলে তা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে আগেই জানাতে হবে। এই মাধ্যমে পরিচালিত প্রচারের খরচ নির্বাচনী ব্যয়ের অংশ হিসেবে ইসিতে জমা দিতে হবে। এতে ঘৃণাত্মক ভাষা, কারও চেহারা বিকৃতি, প্রতিপক্ষকে ব্যক্তিগত আক্রমণ কিংবা নারী, সংখ্যালঘু বা অন্য কোনো জনগোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে উসকানিমূলক মন্তব্য সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। 
 
ইসি সূত্রে জানা গেছে, আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের ঘটনায় প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়টি এবার স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ৯১ ধারা অনুযায়ী প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের আছে, এবার আচরণ বিধিমালাতেও এই বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, আচরণ বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করে দিয়েছি। এতে জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে, প্রার্থিতা বাতিল সংক্রান্ত ধারা যুক্ত করা হয়েছে। বিলবোর্ড ব্যবহারে ব্যয় বাড়বে কি না, সেটি প্রার্থীর ওপর নির্ভর করবে, কারণ পোস্টার তো থাকছে না।

উল্লেখ্য, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণা করা হবে। সেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই আচরণ বিধিমালার খসড়া এবং আরপিও সংশোধন চূড়ান্ত করেছে ইসি।