শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল চালুতে বাধা কী?

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহুল আলোচিত তৃতীয় টার্মিনাল চালুতে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও জাপানি কনসোর্টিয়ামের মধ্যে চুক্তির খসড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মতপার্থক্য চলছে। অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়ায় এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে তৃতীয় টার্মিনাল চালুর কাজ শুরু করতে পারছে না বেবিচক।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, নতুন টার্মিনাল থেকে যাত্রীসেবা, পার্কিং, দোকান, কার্গো হ্যান্ডলিংসহ নানামুখী খাত থেকে বিপুল রাজস্ব আসবে। জাপানি কনসোর্টিয়াম চাইছে এই আয়ের একটি বড় অংশ সরাসরি তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে। অন্যদিকে বেবিচক চাইছে রাষ্ট্রায়ত্ত নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে আয়ের সিংহভাগ সরকারি কোষাগারে রাখতে।
এ প্রসঙ্গে বেবিচকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, চুক্তির ক্ষেত্রে শুধু ব্যবসায়িকভাবে আয়ের বিষয়ই নয়, জাতীয় নিরাপত্তা ও কৌশলগত গুরুত্বও জড়িত। বিদেশি কনসোর্টিয়ামকে কতটুকু নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হবে, আর কতটুকু সরকারের হাতে থাকবে—এ নিয়েই আলোচনা চলছে।
জানা গেছে, প্রকল্পটি ২০২৪ সালের অক্টোবরে চালুর ঘোষণা দেওয়া হলেও পরে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ চালু করার নতুন সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। যদিও বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এ সময়সীমার মধ্যেও তৃতীয় টার্মিনাল চালু করা সম্ভব নয়। চুক্তি সই করতে আরও এক থেকে দুই মাস সময় লাগবে। এরপর প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মাস লাগবে কনসোর্টিয়ামের জনবল নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও যন্ত্রপাতি পরীক্ষায়।
৭ আগস্ট এক বৈঠকে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক বলেন, ‘তৃতীয় টার্মিনাল দ্রুত চালুর চেষ্টা চলছে। জাপানি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে টার্মিনাল পরিচালনার বিষয়ে আলোচনা চলছে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হলে চুক্তি সই হবে। এরপরই আমরা তৃতীয় টার্মিনাল চালুর সঠিক তারিখ জানাতে পারব।’ তিনি আরও জানান, কনস্ট্রাকশন কোম্পানি টার্মিনাল হস্তান্তরের পর সব সরঞ্জাম পরীক্ষাসহ প্রস্তুতিমূলক কাজে ছয় মাস সময় লাগবে।
চুক্তি অনুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনালের অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা করবে জাপান এয়ারপোর্ট টার্মিনাল কোম্পানি, সুমিতোমো করপোরেশন, সোজিৎস ও নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করপোরেশন। আর নিরাপত্তা তদারকি করবে বেবিচক। টার্মিনালে প্রায় ছয় হাজার জনবল কাজ করবে, যার মধ্যে চার হাজার হবেন নিরাপত্তাকর্মী। প্রথম দুই বছর যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডলিং পরিচালনা করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এরপর ধীরে ধীরে দায়িত্ব নেবে জাপানি কনসোর্টিয়াম।
এদিকে তৃতীয় টার্মিনালের কিছু যন্ত্রপাতি ও খুচরা যন্ত্রাংশের ওয়ারেন্টি ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে, আবার কিছু শিগগিরই শেষ হতে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিভিন্ন সরঞ্জাম ও মেশিনারির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। তাই আর্থিক ক্ষতি এড়াতে যত দ্রুত সম্ভব টার্মিনাল চালুর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’