বাংলাদেশি কর্মী বৃদ্ধির জন্য কসোভোকে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০২৫, ১০:১৮ PM

মানবিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বারোপ করে কসোভোর বিভিন্ন খাতে আরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে সুযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি কসোভোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি সংখ্যা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন এবং এ লক্ষ্যে স্কলারশিপ, ফেলোশিপ ও একাডেমিক অনুদান চালুর আহ্বান জানান।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশে নিযুক্ত কসোভো প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রদূত লুলজিম প্লানার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এই আহ্বান জানান। এ সময় অধ্যাপক ইউনূস রাষ্ট্রদূত প্লানাকে তার দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান এবং বাংলাদেশে তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানান।

বাংলাদেশের ‘জুলাই অভ্যুত্থান’-এর চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা কসোভোর জনগণের স্বাধীনতা, শান্তি ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাদের অটুট প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন।

এর জবাবে রাষ্ট্রদূত লুলজিম প্লানা কসোভোকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে কসোভোতে সশস্ত্র সংঘর্ষ পরবর্তী সময়ের কথা স্মরণ করে বলেন, "গ্রামীণ কসোভো আমাদের জাতিকে জীবনের পথে ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।"

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, "আমরা বাংলাদেশকে একটি মূল্যবান অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করি। আমি আপনার ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। গ্রামীণ ট্রাস্টের উদ্যোগ আমাদের জাতির জন্য বড় একটি সহায়তা। কসোভো যুদ্ধোত্তর সময়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী হিসেবে বাংলাদেশি সেনাদের অবদান ও সহায়তার জন্যও আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।"

১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ কসোভো বর্তমানে দেশটির অন্যতম শীর্ষ ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে যা ২০টি পৌরসভা ও ২১৯টি গ্রামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। উল্লেখ্য, তাদের মোট ঋণগ্রহীতার ৯৭ শতাংশই নারী। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছে বাংলাদেশের গ্রামীণ ট্রাস্ট।

চ্যালেঞ্জপূর্ণ সেই সময়ের কথা স্মরণ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, "আমাদের জন্য এটা ছিল একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা। আমরা যখন সেখানে পৌঁছাই, তখন অঞ্চলটি ছিল পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত। পুরুষরা তখনো ঘরে ফেরেনি, কোনো মুদ্রা ছিল না, কোনো ব্যাংকিং ব্যবস্থা ছিল না। সেই শূন্য থেকে আমরা গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু করি।"

সাক্ষাতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়, বিশেষ করে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের বিষয়টি প্রাধান্য পায়।

প্রধান উপদেষ্টা পোশাক, ওষুধ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংসহ কয়েকটি সম্ভাবনাময় খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্ব দেন। একই সঙ্গে তিনি কসোভোর ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে অবস্থিত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

জবাবে রাষ্ট্রদূত লুলজিম প্লানা দুই দেশের ব্যবসায়ী মহলের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে বণিকসভাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন।