বাজেট উপস্থাপনা আজ

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট আজ বিকেলে উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এটি হবে বাংলাদেশের ৫৫তম জাতীয় বাজেট এবং অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে পেশ হওয়া প্রথম বাজেট।
সোমবার (২ জুন) বিকেল ৩টায় বাজেট উপস্থাপন করবেন ড. সালেহউদ্দিন। তার বক্তৃতা রেকর্ড করা হবে এবং বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারে তা সম্প্রচার করা হবে। এ ছাড়া বিটিভির ‘ফিড’ নিয়ে অন্যান্য বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিওতেও একই সময়ে বাজেট বক্তৃতা প্রচারের অনুরোধ জানিয়েছে তথ্য অধিদফতর।
এতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস, ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ এবং আর্থিক শৃঙ্খলার পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি, স্থানীয় শিল্পকে সহজতর করা, কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, এফডিআই আকর্ষণ, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি, কর পরিপালন ঘাটতি কমানো, ভ্যাটের হিসাব ব্যবস্থা সহজীকরণের ওপর জোর দেয়া হবে।
এছাড়াও, ভ্যাট আদায়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্পূরক শুল্ক হারকে যৌক্তিক করতে সংশ্লিষ্ট আইনের কিছু বিধান সরলীকরণের সম্ভাবনা রয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল। গত বছরের তুলনায় এবার সাত হাজার কোটি টাকা কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এবারের বাজেটে গেজেটভুক্ত জুলাই যোদ্ধাদের জন্য থাকছে আলাদা বরাদ্দ। পাশাপাশি তাঁদের করমুক্ত আয় সীমা হবে সোয়া ৫ লাখ টাকা। বরাদ্দ থাকবে নির্বাচনের জন্যও। রাজস্ব আদায়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পরিবর্তন আসবে শুল্ক করে। ধনীদের কাছ থেকে বেশি কর আদায়ের প্রস্তাব করবেন অর্থ উপদেষ্টা।
অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য থাকছে বিশেষ বরাদ্দ। প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থেকে দেওয়া হবে এককালীন অর্থ, মাসিক ভাতা, দেশে-বিদেশে চিকিৎসা খরচ এবং কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ। একই তহবিলের অর্থে তাদের জন্য ফ্ল্যাটও তৈরি করা হবে।
জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বাজেটে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ খাতে থাকছে ২ হাজার ৮০ কোটি টাকা। এবারের বাজেটের সামগ্রিক আকার চলতি অর্থবছরের তুলনায় ০.৮৭ শতাংশ কম। উন্নয়ন বাজেট ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করা হবে। আর রাজস্ব বাজেট ২৮ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা করা হবে।
রাজস্ব নীতিতে মুদ্রানীতির সঙ্গে আরও কঠোর সমন্বয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। অন্যদিকে বাজেটে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কমিশন এবং টাস্কফোর্স রিপোর্টের সুপারিশ প্রতিফলিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রাজস্ব বাজেটের প্রায় ৫৭ শতাংশের সিংহভাগ অর্থ বেতন, ভর্তুকি, প্রণোদনা এবং ঋণ পরিশোধের জন্য বরাদ্দ করা হতে পারে। শুধু বেতন-ভাতা ৮২ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতাও চালু করা হতে পারে। ভর্তুকি ব্যয় মোট ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে সুদ পরিশোধ রাজস্ব বাজেটের প্রায় ২২ শতাংশ হতে পারে।
বাজেটে কালো টাকার মালিকদের জন্য সুখবর থাকছে। আবাসন খাতে এ অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। কমতে পারে জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন ফি ও করহার। করমুক্ত আয়সীমা বাড়তে পারে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ছে। বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনায় বরাদ্দ কমানো হবে।