দ্রোহের কবির মৃত্যুবার্ষিকী আজ

অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, মানবতার প্রতি ভালোবাসা ও সাম্যের অঙ্গীকারে উজ্জ্বল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের আজ ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া নজরুলের ডাকনাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। শৈশব থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। সৃজনশীল সময় মাত্র ২৩ বছর হলেও তাঁর কবিতা, গান ও সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে এনেছিল নতুন জাগরণ।
‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে খ্যাত নজরুল একইসঙ্গে প্রেমের কবি। নিজেই বলেছিলেন—‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণতূর্য।’ তার রচনা যুগে যুগে মানুষকে শোষণ–বঞ্চনা থেকে মুক্তির প্রেরণা জুগিয়েছে।
বিংশ শতাব্দীর বাঙালির মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। তার কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। তার কবিতা ও গানের জনপ্রিয়তা বাংলাভাষী পাঠকের মধ্যে তুঙ্গস্পর্শী। তিনি বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখযোগ্য। তার মানবিকতা, ঔপনিবেশিক শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধতা বোধ এবং নারী-পুরুষের সমতার বন্দনা গত প্রায় একশত বছর যাবৎ বাঙালির মানসপট গঠনে ভূমিকা রেখে চলেছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে নজরুলকে ভারত থেকে সপরিবারে বাংলাদেশে আনা হয়। জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়ে ধানমন্ডিতে বাসস্থানের ব্যবস্থা করে সরকার। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডি.লিট উপাধি দেওয়া। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে নাগরিকত্ব দেয় এবং একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।
পারিবারিক জীবন
১৯২১ সালের এপ্রিল-জুন মাসের দিকে নজরুল মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে গ্রন্থ প্রকাশক আলী আকবর খানের সাথে পরিচিত হন। তার সাথেই তিনি প্রথম কুমিল্লার বিরজাসুন্দরী দেবীর বাড়িতে আসেন। আর এখানেই পরিচিত হন প্রমীলা দেবীর সাথে যার সাথে তার প্রথমে প্রণয় ও পরে বিয়ে হয়েছিল। তবে এর আগে নজরুলের বিয়ে ঠিক হয় আলী আকবর খানের ভগ্নী নার্গিস আসার খানমের সাথে। বিয়ের আকদ সম্পন্ন হবার পরে কাবিনে নজরুলের ঘরজামাই থাকার শর্ত নিয়ে বিরোধ বাধে। নজরুল ঘর জামাই থাকতে অস্বীকার করেন এবং বাসর সম্পন্ন হওয়ার আগেই নার্গিসকে রেখে কুমিল্লা শহরে বিরজাসুন্দরী দেবীর বাড়িতে চলে যান। তখন নজরুল খুব অসুস্থ ছিলেন এবং প্রমিলা দেবী নজরুলের পরিচর্যা করেন। একপর্যায়ে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
নজরুল সাম্যবাদের একজন অগ্রদূত ছিলেন। তিনি মুসলিম হয়েও চার সন্তানের নাম বাংলা এবং আরবি-ফারসি উভয় ভাষায়ই নামকরণ করেন। যথা- কৃষ্ণ মুহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ (বুলবুল), কাজী সব্যসাচী এবং কাজী অনিরুদ্ধ।
জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সকাল ৮টায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচি। বাংলা একাডেমি কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বিকেল ৪টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘নজরুলের মৌলচেতনা অদ্বৈতবাদী সমন্বয়ের’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন নজরুল গবেষক অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক। আলোচনায় অংশ নেবেন নজরুল গবেষক ড. সৈয়দা মোতাহেরা বানু এবং কবি ও প্রাবন্ধিক কাজী নাসির মামুন। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।