আইসিসির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা; যা বলল ইইউ

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:২৪ PM

ইসরায়েল রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকেই দেশটির যাবতীয় অপকর্মের সহযোগিতা করে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের অধিকৃত গাজায় গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে দখলদার ইসরায়েল। তাদের এই অপকর্মে প্রথম থেকেই সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলি এই হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে আইসিসির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সংস্থাটির স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলছে বলে সতর্ক করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গতকাল এক বিবৃতিতে ইইউ বলেছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বব্যাপী বিচার ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার এক নির্বাহী আদেশে আইসিসিকে ‘অবৈধ’ উল্লেখ করে এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই আদেশে বলা হয়, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার মাধ্যমে আইসিসি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে।

ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি আন্তোনিও কোস্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স লিখেছেন, ‘আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আদালতের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচার ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’

এ ছাড়া ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র এএফপিকে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ চলমান তদন্ত এবং কার্যক্রমের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে ইউক্রেনের ক্ষেত্রে এটি বিশ্বব্যাপী দায়বদ্ধতা নিশ্চতে বছরের পর বছর ধরে চালানো প্রচেষ্টাকে প্রভাবিত করতে পারে।’

ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র আরও জানান, ইইউ ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করবে এবং সম্ভবত আরও পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মূল্যায়ন করবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের আওতায় মার্কিন নাগরিক বা তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে আইসিসির তদন্তে সহায়তাকারী ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের ওপর আর্থিক এবং ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আইসিসি এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, আইসিসি সম্ভাব্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় আগে থেকেই প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে। এরই মধ্যে সংস্থাটি তাদের কার্মীদের তিন মাসের বেতন অগ্রিম পরিশোধ করে দিয়েছে, যাতে আর্থিক নিষেধাজ্ঞার কারণে আইসিসির কার্যক্রম ব্যহত না হয়।

আইসিসির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০২০ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর ‘কথিত’ যুদ্ধাপরাধ তদন্তের জন্য আইসিসির তৎকালীন প্রধান প্রসিকিউটর ফাতু বেনসুদা ও তাঁর এক সহযোগীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ১২৫টি। এই আদালত যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও সদস্য রাষ্ট্রের ভূখণ্ড বা তাদের নাগরিকদের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের অপরাধের জন্য ব্যক্তিদের বিচার করতে পারে। তবে গুরুত্বপূর্ণ চারটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ইসরায়েল আইসিসির সদস্য নয়।