আদানির সঙ্গে সব চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৮ PM

বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সঙ্গে একতরফা চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. আবদুল কাইয়ুম।

আজ বুধবার (১৩ নভেম্বর) এই রিট পিটিশন দায়ের করেন তিনি।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সঙ্গে হওয়া চুক্তি দেশের স্বার্থবিরোধী উল্লেখ করে এই রিট দায়ের করেছেন এম. আবদুল কাইয়ুম। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রিটটির শুনানি হবে।

এর আগে গত ৬ নভেম্বর বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সঙ্গে সব চুক্তি বাতিল চেয়ে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম কাইয়ুম। আইনি নোটিশে অবিলম্বে অন্যায্য একতরফা চুক্তি পুনর্বিবেচনা অথবা পুরোটাই বাতিল চাওয়া হয়।

সে সময় জ্বালানি ও আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে বিস্তারিত রিপোর্ট দেওয়ার জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছিল। লিগ্যাল নোটিশের জবাব দিতে পিডিবির চেয়ারম্যান ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে তিনদিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।

উল্লেখ্য, ভারতের আদানি গ্রুপের ৮৫ কোটি ডলার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে বাংলাদেশের। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই বকেয়া আদায়ে নভেম্বরের শুরু থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে আদানি। তবে এই কার্যক্রমকে শুধুই বকেয়া আদায়ের পদক্ষেপ হিসেবে দেখতে নারাজ বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কে টানাপোড়েনের কারণেই মোদি সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আদানি গ্রুপ এই ব্যবস্থা নিয়েছে। 

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য পর্যালোচনা করেও বিশ্লেষকদের মতামতের সত্যতা মেলে। আদানির বকেয়ার প্রায় পুরোটাই আগের সরকারের আমলের। গত জুলাই পর্যন্ত আদানির পাওনা ছিল ৮০ কোটি ডলার। তখন এভাবে সরবরাহ কমানো হয়নি। বরং অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই বিল দেওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। গত অক্টোবরে আদানিকে বাংলাদেশ দিয়েছে ৯ কোটি ডলার, যা গত কয়েক মাসের সর্বোচ্চ। তার পরও কমানো হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। 

২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথম বাংলাদেশ সফরের সময় তার ঘনিষ্ঠ দুই ব্যবসায়ী রিলায়েন্স ও আদানির জন্য বিদ্যুৎ ব্যবসার বিষয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেন। মোদির সফরের দুই মাসের মাথায় আদানি পাওয়ারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। 

চুক্তি অনুযায়ী, এই কেন্দ্র থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কিনবে পিডিবি। দীর্ঘমেয়াদি এই চুক্তির পরতে পরতে ছিল অসমতা। চুক্তিতে এমন অনেক শর্ত আছে, যেগুলোর কারণে ২৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা বাড়তি নিয়ে যাবে আদানি। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ তিন মাস পরপর কত বিদ্যুৎ নেবে, তা আগেই ঘোষণা করতে হবে। যদি বাংলাদেশ এর চেয়ে কম বিদ্যুৎ নেয়, তাহলেও ঘোষিত পরিমাণের সমান দাম পরিশোধ করতে হবে। অথচ বাংলাদেশে যেসব বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে, সেগুলোর সঙ্গে এমন কোনো শর্ত নেই।

চুক্তি অনুযায়ী, এই কেন্দ্র থেকে পিডিবি কখনোই ৩৪ শতাংশের নিচে বিদ্যুৎ নিতে পারবে না। কম বিদ্যুৎ নিলে ৩৪ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে যত কয়লা ব্যবহার করা হতো, তার দাম ও কয়লা পরিবহন খরচের অর্থ দিতে হতো। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার পরিমাণ, ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বেশি ধরা হয়েছে। আদানির সঙ্গে চুক্তিতে কয়লার সিস্টেমলস ধরা হয়েছে ১ দশমিক ১০ শতাংশ; দেশের অন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর চুক্তিতে এমন বিধান নেই। দেরিতে বিল পরিশোধের জন্য বছরে ১৫ শতাংশের সুদ ধরা আছে আদানির চুক্তিতে, যা পায়রার বিদ্যুৎকেন্দ্রে নেই।

রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে আদানির কয়লার দাম বেশি, মানও খারাপ। অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা কেনায় সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ ছাড় মিললেও আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে তা পাচ্ছে না পিডিবি। পিডিবির একজন সাবেক প্রকৌশলী বলেন, পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে কয়লা কেনায় ছাড়ের বিষয়টি রয়েছে। তবে, আদানি নিজের খনির কয়লা সরবরাহ করে। তার চুক্তিতে ছাড়ের বিষয়টি নেই। ফলে কয়লার দাম বেশি নিচ্ছে ভারতীয় কোম্পানিটি।