শেখ হাসিনা ও কামালের খালাস চেয়ে যুক্তি উপস্থাপন করলেন আমির হোসেন
-1220404.png?v=1.1)
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের খালাস চেয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। টানা তিনদিনের যুক্তিতর্ক শেষে তিনি আদালতে তাদের নির্দোষ দাবি করেছেন এবং খালাসের আবেদন জানিয়েছেন।
বুধবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার ও সদস্য বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্যানেলে তার আবেদন উপস্থাপন করেন। সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সোয়া ৩টা পর্যন্ত তার যুক্তিতর্ক চলেছিল।
এদিন আমির হোসেন, আদালতে রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্যদানকারী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, দৈনিক 'আমার দেশ' সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের জবানবন্দি খণ্ডন করেন। তিনি বলেন, 'মামুন তার স্বার্থ রক্ষার্থে অন্যদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বাঁচতে চাইছেন।' এছাড়া মাহমুদুর রহমানের সাক্ষ্যকে একেবারে অগ্রহণযোগ্য দাবি করে বলেন, 'তিনি ভিন্ন মতাদর্শের কারণে শেখ হাসিনাকে সন্দেহের চোখে দেখেন, তাই তার সাক্ষ্য মামলার ফলাফলে কোনো প্রভাব ফেলবে না।'
এদিকে, প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ, মঈনুল করিম এবং সুলতান মাহমুদসহ অন্যান্য প্রসিকিউটররা।
পূর্ববর্তী দিনের মতো, গতকাল (২১ অক্টোবর) রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন দ্বিতীয় দিনের যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটির মাধ্যমে তাঁর মক্কেলদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খণ্ডন করেছেন। ওইদিন তিনি একাত্তরের পটভূমি, শাপলা চত্বরে হত্যাযজ্ঞ এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ঘটনাগুলোর মাধ্যমে প্রসিকিউশনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানান।
১৬ অক্টোবর প্রসিকিউশন তাদের টানা পাঁচদিনের যুক্তিতর্ক শেষ করে মামলায় শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে চরম দণ্ড (মৃত্যুদণ্ড) চেয়ে আবেদন করে। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, 'এই মামলায় আসামিরা মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী এবং তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।'
এছাড়া, ৮ অক্টোবর মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে তৃতীয় দিনের মতো জেরা করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। তার পরই যুক্তিতর্কের জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়। ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে।
এই মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজেকে রাজসাক্ষী হিসেবে প্রমাণ করেছেন, এবং তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রসিকিউশনের পক্ষে মামলায় শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার, যার মধ্যে তথ্যসূত্র ২,০১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪,৫০০ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকা ২,৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে।
এই মামলার রায় এখনও ঘোষণা হয়নি, তবে এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।