ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বইপাঠ
বই পাঠ ও জ্ঞানচর্চা একজন মুসলমানের আত্মার প্রশান্তি বয়ে আনে। মানবজাতির মুক্তির একমাত্র ঠিকানা ইসলাম বই পাঠ ও জ্ঞানচর্চার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছে। মুসলিমমাত্রই জ্ঞানমনস্ক হবে। বইয়ের উষ্ণ সান্নিধ্যে তার প্রাণ জুড়াবে। লাইব্রেরির বইগুলো দেখলেই তার মনে আনন্দের হিল্লোল বইবে। কারণ বই পাঠের মাধ্যমে সে মূর্খতার অন্ধকার থেকে জ্ঞানের আলোকময় রাজপথে এগিয়ে যাবে। এ বিষয়ে লিখেছেন: আব্দুল্লাহ আলমামুন আশরাফী
পড়াশোনার মাধ্যমে সে আপন রব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতালার পরিচয় লাভ করবে। পাঠের স্নিগ্ধ সরোবরে অবগাহন করে মানবতার অহংকার রসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুরভিত জীবনপাতায় নিজের জীবনপথের পাথেয় খুঁজে নেবে।
মানবজাতিকে সঠিক পথপ্রদর্শনের দৃপ্ত শপথ নিয়ে পৃথিবীতে আসা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা মানবজাতির জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার কোরআন মাজিদের প্রথম নির্দেশনাই হচ্ছে ‘পড়’। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরাতুল আলাক : ০১)
জ্ঞান শব্দের আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘ইলম’। কোরআন মাজিদে এবং হাদিস শরিফে ইলম শব্দের বহুল প্রয়োগ দেখা যায়। ইলম শব্দের অর্থ জানা বা কোনো বিষয়ে জ্ঞানার্জন করা। কোরআন সুন্নাহর পরিভাষায় ইলম বা জ্ঞান হচ্ছে- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতালার পরিচয় লাভ করা। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে যে দীন নিয়ে এসেছেন, তা গভীরভাবে উপলব্ধি করে সে অনুযায়ী জীবন সাজানোর প্রয়াস পাওয়া। সর্বোপরি একজন মানুষ তার স্রষ্টার পরিচয় লাভপূর্বক দুনিয়া আখেরাতে তার জন্য কল্যাণকর ও ক্ষতিকর বিষয়াবলি সম্পর্কে অবগতি লাভের প্রয়াসকে কোরআন সুন্নাহ জ্ঞানচর্চা হিসেবে অবহিত করা হয়েছে।
কোরআন সুন্নাহ বর্ণিত ইলম বা জ্ঞানের সন্ধান পেতে আমাদের সর্বপ্রথম কোরআন মাজিদ পাঠ করতে হবে। কারণ কোরআন মাজিদ আমাদের স্রষ্টা আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরেছে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ও শক্তিশালী দলিলের মাধ্যমে। কোরআন মানবজাতিকে সঠিক পথ দেখায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাস সেই মাস যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে, যে কোরআন মানুষকে সঠিক পথ দেখায়।’ (সুরা বাকারা : ১৮৫)
কোরআন মাজিদের বিশদ ব্যাখ্যামালা হাদিস শরিফের পাঠে আত্মনিয়োগ করতে হবে। কারণ হাদিস শরিফের পাঠ ছাড়া কোরআন মাজিদ বোঝা অসম্ভব। অতঃপর কোরআন ও সুন্নাহর সারনির্যাস ফিকহ তথা যাপিত জীবনে পালনীয় ইসলামি বিধিবিধান বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে। এভাবে কোরআন সুন্নাহ রিলেটেড বিষয়ে পাঠ গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহর বান্দাদের উপকার বয়ে আনে এমন বিষয়ে লিখিত বইপত্র পাঠের বিষয়েও কোরআন সুন্নাহর নির্দেশনা রয়েছে। পক্ষান্তরে যেসব বইপত্র মানুষকে আল্লাহ ও রসুলের স্মরণকে ভুলিয়ে দেয়, চিন্তাচেতনা ও আখলাক চরিত্র নষ্ট করে সেসব বইপত্র থেকে যোজন যোজন দূরে থাকতে হবে। চরিত্রবিধ্বংসী সাহিত্যের ধারে কাছেও যাওয়া যাবে না।
পবিত্র কোরআন মাজিদে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ করে এমন সবকিছু থেকে দূরে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা এ জাতীয় আয়োজন (গানবাজনা বা অশ্লীল সাহিত্যচর্চা ও নিরর্থক বিনোদন) করে আল্লাহ তাদের জন্য ভয়াবহ শাস্তির ধমকি বাণী দিয়ে বলেন, ‘কতক মানুষ এমন, যারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিচ্যুত করার জন্য খরিদ করে এমন সব কথা, যা আল্লাহ সম্পর্কে উদাসীন করে দেয় এবং তারা আল্লাহর পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করে। তাদের জন্য আছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি।’ (লুকমান-৬)
কোরআন সুন্নাহর জ্ঞানে যারা পরিপক্ব তাদের লেখা বইপত্র অধ্যয়ন করতে হবে। যারা জ্ঞানার্জনের ট্রাডিশনাল ধারা তথা দক্ষ বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে একটা নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত একাডেমিক পড়াশোনার স্তরগুলো পার করেছেন এবং সালাফে সালেহীন ও আকাবিরে দীন অর্থাৎ পূর্বসূরি উলামায়ে কেরামের চিন্তাচেতনা ও কর্মপন্থা অনুসরণ করে জ্ঞান-গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেছেন তাদের লেখা বইপত্র অধ্যয়ন করা উচিত। কোরআন মাজিদে এমন পরিপক্ব জ্ঞানের অধিকারীদের প্রশংসা করা হয়েছে।