আল্লাহভীরু মুমিন বান্দা কেয়ামতের দিনে আল্লাহর আরশের ছায়ায় স্থান পাবে
মহান আল্লাহ তায়ালার ভয় আপনার মুক্তির কারণ
আল্লাহভীতি আদর্শ মানুষের জীবনের মূলভিত্তি। আল্লাহভীতির অর্থ হচ্ছে, মহান আল্লাহকে সম্মান প্রদর্শন এবং তার সম্পর্কে জেনে তাকে ভয় করা, তার আদেশ পালন করা এবং তার নিষেধ থেকে বিরত থাকা।
ভয়ের সংজ্ঞা : খাওফুন আরবি শব্দ। এর অর্থ ভয়। তবে এর আভিধানিক অর্থ হলো ‘কাঙ্ক্ষিত বিষয় হাতছাড়া এবং অবাঞ্ছিত বিষয়ে পতিত হওয়ার আশঙ্কায় অন্তরে অনুভূত সৃষ্ট এক ধরনের প্রতিক্রিয়ার নাম ভয়।’ (আল মুজামুল ওয়াসিত ২৬২)
কেউ কেউ ভয়ের সংজ্ঞায় লিখেছেন, ‘আল্লাহর প্রতাপ ও বড়ত্বের কারণে অন্তর প্রকম্পিত হওয়া।’ ইমাম গাজালি (রহ.) ভয়ের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘ভবিষ্যতে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কায় অন্তরে এক প্রকার জ¦লন ও পোড়নের নাম ভয়।’ তিনি আরেক স্থানে লিখেছেন, ‘ভয় হলো একটি চাবুক, যা বান্দাকে সৌভাগ্যশীলতার দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যায়।’
ভয়ের হকিকত : এখানে ভয় দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহর ভয়। আর আল্লাহকে ভয় করার অর্থ হলো তার শাস্তিকে ভয় করা। ভয় তখনই সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়িত হবে, যখন আল্লাহর সব আদেশ মানা হবে এবং সব নিষেধ বর্জন করা হবে। এ হিসেবে বলা যায়, আল্লাহর ভয়ের প্রকৃত অর্থ হলো, আল্লাহর আজাব ও গজবের কথা মনে করে তার যাবতীয় আদেশ-নিষেধ পালন করা।
দুনিয়া ও আখেরাতে সাফল্য লাভ : আল্লাহভীতি অবলম্বনকারী বান্দা আল্লাহর পথে চলার সঠিক নির্দেশনা পায়। সে এ পথে সুদৃঢ় থাকে। এর ফলে সে দুনিয়া ও আখেরাতে সাফল্য লাভ করে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুত্তাকিদের জন্য রয়েছে সফলতা।’ (সুরা নাবা ৩১) আল্লাহভীতি অবলম্বনকারী ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার অমিয় নূর বা জ্যোতি লাভ করে। ফলে তার অন্তর পবিত্র আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে। আল্লাহতায়ালা আল্লাহভীরু লোকদের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহভীতি মানুষকে সৎ, সুশীল, শোভন ও চরিত্রবান করে গড়ে তোলে। যার ফলে আল্লাহভীরু মানুষ সমাজে সবার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার পাত্রে পরিণত হয়।
আল্লাহভীরু মুমিন বান্দা কেয়ামতের দিনে আল্লাহর আরশের ছায়ায় স্থান পাবে। এ বিষয়ে রাসুল (সা.) বলেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। সেদিন সাত শ্রেণির লোককে আল্লাহ তার আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। তাদের একজন হলেন ওই ব্যক্তি, যাকে কোনো উচ্চ বংশীয় পদমর্যাদা সম্পন্ন রূপসী নারী অশ্লীল কাজের জন্য আহ্বান জানায়, কিন্তু সে এই বলে তা প্রত্যাখ্যান করে যে, আমি আল্লাহকে ভয় করি। হাদিসে বর্ণিত সপ্তম ব্যক্তি হচ্ছে, যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে (জিকির করে), ফলে তার দুচোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয়।’(সহিহ বুখারি)
জান্নাত লাভ নিশ্চিত করে : আল্লাহভীতি বান্দার জান্নাত লাভ নিশ্চিত করে। একবার রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন কাজের জন্য মানুষ অধিক জান্নাতে প্রবেশ করবে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর ভয় এবং সুন্দর চরিত্র।’ (জামে তিরমিজি) পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যে স্বীয় প্রভুর সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই হবে তার আবাসস্থল।’ (সুরা নাজিআত ৪০-৪১) মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তার ভয়ে গুনাহ হতে বেঁচে থাকে তারাই মূলত সফলকাম।’ (সুরা নুর ৫২)
আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর যে ব্যক্তি (কেয়ামতের দিন) তার প্রতিপালকের সামনে দণ্ডায়মান হতে ভয় করে, তার জন্য রয়েছে দুটি জান্নাত। (সুরা আর রাহমান ৪৬) অর্থাৎ যে ব্যক্তি আপন প্রভুর সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে, যার অন্তরে আল্লাহর ভয় রয়েছে এবং নির্জনে থাকাকালীন তার অন্তরে কোনো গুনাহের সাধ জাগলে সঙ্গে সঙ্গে সে আল্লাহর কথা স্মরণ করে এবং ভাবে আমাকে তো একদিন আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। এ কথা চিন্তা করে সে গুনাহের ইচ্ছা ত্যাগ করে। এমন ব্যক্তির জন্য রয়েছে দুটি জান্নাত।
মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ। তাই জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তার নির্দেশ পালন করা এবং তার শক্তি ও শাস্তি নিয়েও চিন্তা করা উচিত। এতে অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হবে। দুনিয়াতে আল্লাহকে ভয় করা আখেরাতে নিরাপত্তার মাধ্যম। এ ভয় উভয় জগতে সফলতা ও কামিয়াবির পথ। আল্লাহভীতি পরিপূর্ণ ইমানের দলিল। এ ভয় ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্য, আত্মার পরিশুদ্ধি এবং কলবের পবিত্রতার নির্দেশক। আল্লাহতায়ালা আমাদের অন্তরে তার ভয় জাগ্রত করার তওফিক দান করুন।