মানবজীবনে সম্প্রীতি রক্ষা করা আমাদের কাজ
কোরআন ও হাদিসে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সম্পর্ক ছিন্ন করা কবিরা গুনাহ। মুমিন ব্যক্তি কখনো এমন কাজ করতে পারে না। একজন মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সবার সঙ্গে সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক ও মেলবন্ধন টিকিয়ে রাখা। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আল্লাহ যা সংযুক্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যারা তা সংযুক্ত রাখে (সম্পর্ক বজায় রাখে), নিজেদের প্রভুকে ভয় করে এবং কঠিন হিসাবের আশঙ্কায় থাকে। যারা তাদের রবের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সবর করে, নামাজ আদায় করে এবং আমি তাদের যে রিজিক প্রদান করেছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং ভালো কাজের মাধ্যমে মন্দকে দূর করে, তাদের জন্যই রয়েছে আখেরাতে শুভ পরিণাম।’ (সুরা রাদ ২১-২২)
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যাপারে হাদিসে কঠিন হুঁশিয়ারি এসেছে। হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যাবতীয় সৃষ্টিকে সৃষ্টি করলেন। যখন তিনি সৃষ্টি কাজ সমাধা করলেন, তখন আত্মীয়তার সম্পর্ক বলে উঠল, সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে আপনার কাছে আশ্রয়প্রার্থীদের এটাই যথাযোগ্য স্থান, তিনি (আল্লাহ) বললেন, হ্যাঁ, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তোমার সঙ্গে যে সুসম্পর্ক রাখবে, আমিও তার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখব? আর যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আমিও তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করব। সে বলল হ্যাঁ, আমি সন্তুষ্ট হে আমার রব! আল্লাহ বললেন তোমার জন্য সেটাই হবে। অতঃপর রাসুল (সা.) বলেন, ইচ্ছা করলে তোমরা (এ আয়াতটি) পড়, ‘তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তোমাদের কাছ থেকে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করা এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা ছাড়া আর কী আশা করা যায়? ওরা তো তারাই আল্লাহ যাদের অভিশাপ করেছেন, বধির করে দিয়েছেন এবং তাদের চোখ অন্ধ করে দিয়েছেন। তারা কি কোরআন অনুধাবন করবে না? তাদের অন্তরগুলোর ওপর তালা দেওয়া।’ (সহিহ মুসলিম)
মানুষ যদি আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার কারণ কী, তা ভেবে দেখে, তাহলে দেখা যাবে ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার তুচ্ছ স্বার্থই প্রকৃত কারণ। কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে যার কোনো মূল্য নেই। কিংবা এর কারণ হচ্ছে, তাদের মধ্যে শয়তানের প্ররোচনা। শয়তান হীন সব কারণে তাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ তৈরি করে; যেসব কারণ ভ্রƒক্ষেপ করার মতো কিছু নয়। এমনকি সম্পর্ক ছিন্ন করার যথাযথ কারণও যদি থাকে তবুও শরিয়ত সম্পর্ক রক্ষা করে চলার নির্দেশ দেয়। ভুলগুলো এড়িয়ে ক্ষমা করে দেওয়া এবং সহনশীল হওয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার কিছু আত্মীয় আছে, আমি তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলি, কিন্তু তারা আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে। আমি তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করি, তারা আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। আমি তাদের সঙ্গে সহিষ্ণু আচরণ করি, তারা আমার সঙ্গে মূর্খের মতো আচরণ করে। তখন রাসুল (সা.) বললেন, তুমি যেমনটি উল্লেখ করেছো, যদি তুমি তেমন হও, তাহলে তুমি যেন তাদের মুখে গরম ছাই ছুড়ে দিচ্ছো। তুমি যতক্ষণ এর ওপর অটল থাকবে ততক্ষণ তাদের বিরুদ্ধে তোমার সঙ্গে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী থাকবে।’ (সহিহ মুসলিম)