অহেতুক প্রশ্ন করা প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) এর বাণী
অহেতুক কোনো কাজ ভালো না। মুমিনের অনন্য গুণ হলো তারা অনর্থক কাজকর্ম থেকে বিরত থাকে। অনর্থক প্রশ্ন করা মন্দ স্বভাবের কাজ। এ কাজের জন্য মানুষকে ঘৃণিত ও নিন্দিত হতে হয়।
লোকসমাজে তার কোনো মূল্যায়ন থাকে না। স্বাভাবিকভাবে এটাকে বদ স্বভাব ও মন্দ অভ্যাস মনে করা হয়।
কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর বিধি-বিধান নিয়ে বিনা প্রয়োজনে প্রশ্নের ওপর প্রশ্ন তুলতে থাকে। পবিত্র কোরআনে এরূপ প্রশ্ন না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা এমন সব বিষয়ে প্রশ্ন কোরো না, যা প্রকাশ করা হলে তোমাদের কাছে অপ্রীতিকর মনে হবে।... (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ১০১)
এই আয়াতের শানেনুজুল হলো হজ ফরজ হওয়া সম্পর্কিত আদেশ অবতীর্ণ হলে আকরা ইবনে হাবেস (রা.) জানতে চাইলেন, প্রতি বছরই কি হজ করা ফরজ? প্রশ্নকারী তৃতীয়বার প্রশ্ন করলে শাসনের সুরে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যদি আমি তোমার জবাবে হ্যাঁ বলে দিতাম, তবে তাই হয়ে যেত। কিন্তু তুমি তো এই আদেশ পালন করতে সক্ষম না। অতঃপর বলেন, ‘যেসব বিষয় সম্পর্কে আমি তোমাদের কোনো নির্দেশ না দিই, সেগুলোকে সেভাবেই থাকতে দিয়ো, অহেতুক প্রশ্ন কোরো না।
তোমাদের আগে বহু উম্মত বেশি বেশি প্রশ্ন করে ধ্বংস ডেকে এনেছে। আল্লাহ ও রাসুল যেসব বিষয় ফরজ করেননি, তারা প্রশ্ন করে সেগুলোকে ফরজ করিয়ে নিয়েছিল। পরে সেগুলোর বিরুদ্ধাচরণে লিপ্ত হয়েছিল। কাজেই আমি যে কাজের আদেশ দিই সাধ্যানুযায়ী তা পালন করা এবং যে কাজের নিষেধ করি, তা পরিত্যাগ করাই তোমাদের কর্তব্য। যেসব বিষয়ে আমি নীরব থাকি, সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন কোরো না।
’ (সুনানে বাইহাকি, হাদিস : ৮৬২০)
ইমাম দারাকুতনীর বর্ণনায় আছে, এরই পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত আয়াত নাজিল হয়।
সুরা মায়িদার ওই আয়াতের মর্ম হচ্ছে, যেসব বিষয়ের বিশেষ কোনো প্রয়োজন নেই, প্রথমত, তার অনুসন্ধানে লিপ্ত হওয়া একটা নিরর্থক কাজ। দ্বিতীয়ত, আল্লাহ তাআলা অনেক সময় কোনো কোনো বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আদেশ দেন। সেই আদেশ অনুসারে মোটামুটিভাবে কাজ করলেই তা যথেষ্ট হয়। সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানোর দরকার হলে কোরআন ও হাদিসের মাধ্যমে তা জানিয়ে দিতেন। তা যখন করা হয়নি তখন এর চুলচেরা বিশ্লেষণের পেছনে পড়ার কোনো অর্থ নেই। এভাবে খুঁটিনাটি বিষয়ে প্রশ্ন করা বনি ইসরাঈলের স্বভাব। সুরা বাকারায় এ ব্যাপারে গাভি জবাইসংক্রান্ত ঘটনাটি প্রসিদ্ধ।
তাই প্রিয় নবী (সা.) স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ‘যে বিষয়ে খুঁটিনাটি বিবরণ দেওয়া হয়নি, তার যতটুকু বলা হয়েছে তা পালন করা যদি সম্ভব হয়, তবে তোমরা তার খুঁটিনাটির পেছনে পড়বে না। যতটুকু বলা হয়েছে অতটুকুতেই ক্ষান্ত থাকবে, যদিও বিষয়টি খুঁটিনাটি ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে। এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুসলমানদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুতর অপরাধী ওই ব্যক্তি, যে ব্যক্তি এমন কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করে, যা আগে হারাম করা হয়নি। কিন্তু তার প্রশ্নের কারণে তা হারাম হয়ে গেছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৭৯১)
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আমাকে প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকো, যতক্ষণ না আমি তোমাদের কিছু বলি। কেননা, তোমাদের আগে যারা ছিল, তারা তাদের নবীদের অধিক প্রশ্ন করা ও নবীদের সঙ্গে মতবিরোধ করার কারণে ধ্বংস হয়েছে। তাই আমি যখন তোমাদের কোনো বিষয়ে নিষেধ করি, তখন তা থেকে বেঁচে থাকো। আর যদি কোনো বিষয়ে আদেশ করি তাহলে সাধ্যমতো পালন করো।’(সহিহ বুখরি, হাদিস : ৭২৮৮)