টানা তিন বছর ধরে কমছে চীনের জনসংখ্যা; অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪৩ AM

টানা তিন বছর ধরে কমেছে চীনের জনসংখ্যা। যে দেশটি শত বছর ধরে পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল, এখন দ্বিতীয় অবস্থানে চলে গেছে। ২০২৩ সালে ভারতের জনসংখ্যা চীনকে ছাড়িয়ে যায়।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) চীনের সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, ২০২৪ সালে চীনের জনসংখ্যা টানা তৃতীয় বছর হ্রাস পাবে। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত এক বছরে চীনের জনসংখ্যা ১.৩৯ মিলিয়ন কমেছে।

তথ্য অনুযায়ী, চীনের মূল ভূখণ্ডের জনসংখ্যা ২০২৩ সালে ১৪১ কোটি থেকে কমে ১৪০ কোটি ৮০ লাখে দাঁড়িয়েছে। এ থেকে স্পষ্ট যে, আগামী বছরগুলোতে বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে জনবহুল দেশে এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে এবং তা আরও তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে, দেশটিতে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমছে।

চীনে ১৯৮০ এর দশক থেকেই ধীরে ধীরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমতে থাকে। তবে ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো মৃত্যুহার জন্মহারকে ছাড়িয়ে যায়, যা শেষবার ১৯৬১ সালে, ‘গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড’ দুর্ভিক্ষের সময় ঘটেছিল, যখন ২ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল।

জন্মহার বাড়ানোর জন্য বেইজিং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে দীর্ঘমেয়াদী এই প্রবণতা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি। গত বছর, চীনে ১০.৯৩ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে, যা ২০২৩ সালে ১১.১ মিলিয়ন থেকে ১.৫% কম। মৃত্যুহারের মধ্যে প্রতি হাজারে ৭.৮৭ থেকে কমে ৭.৭৬ হয়েছে। তবে, কম জন্মহার জনসংখ্যা হ্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জনসংখ্যা বাড়াতে বেইজিং অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। একদিকে অবিবাহিত নারীদের ‘অবশিষ্ট’ আখ্যা দিয়ে বিবাহ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার চেষ্টা, অন্যদিকে গর্ভপাত ও বিবাহবিচ্ছেদ প্রক্রিয়া কঠোর করা হয়েছে। একইসঙ্গে, শিশুপালনের খরচ সহায়তা করতে দম্পতিদের ভর্তুকি প্রদান করা হচ্ছে।

২০১৬ সালে চীন তাদের ‘এক সন্তান নীতি’ বাতিল করে এবং পরিবারগুলোকে দুটি সন্তান ধারণের অনুমতি দেওয়া হয়। ২০২১ সালে এটি তিন সন্তানের সুযোগেও বাড়ানো হয়। তবে উচ্চ নগর জীবনের ব্যয়, ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং যুব বেকারত্বের উচ্চ হার নতুন প্রজন্মকে সন্তান ধারণে অনীহা তৈরি করছে। সরকারের নানা পদক্ষেপ সত্ত্বেও এই প্রবণতা কমছে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন যদি জনসংখ্যা হ্রাসের এই প্রবণতা থামাতে না পারে, তাহলে দেশটি অদূর ভবিষ্যতে বড় অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে পারে। এমনকি, পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যদি এই হ্রাসের হার একইভাবে চলতে থাকে, তাহলে এক হাজার বছরের মধ্যে চীনের জনসংখ্যা শূন্য হয়ে যেতে পারে।