জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য বাড়ানোর আলোচনায় ৬ দেশ; ভারতের পক্ষে বাড়ছে জনমত
জাতিসংঘের সবচেয়ে কার্যকরী পরিষদকে বলা হয় নিরাপত্তা পরিষদ। এই পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের রয়েছে ভেটো পাওয়ার। যে পাওয়ার দিয়ে যে কোন প্রস্তাবকে পাশ বা ফেল করানো যায়। এবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আরও ছয়টি দেশকে স্থায়ী সদস্যপদ দেওয়ার পক্ষে আহ্বান এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে কয়েকজন বিশ্বনেতার ভাষণে এ নিয়ে ছিল জোরাল দাবি।
তাদের মধ্যে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ নিরাপত্তা পরিষদে ভারতকে স্থায়ী সদস্য করার পক্ষে জোরালো যুক্তি দেন। তিনি বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদের দরজা বন্ধ থাকবে এবং প্রতিটি পক্ষ শুধু তাদের নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষা করবে, ততদিন আমরা সামনে এগিয়ে যেতে বাধার মুখে পড়ব। কাজেই আসুন, জাতিসংঘকে আরও কার্যকর করে তুলি। এ বিষয়ে প্রাথমিক উদ্যোগ হওয়া উচিত—একে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলা। এ কারণে নিরাপত্তা পরিষদের পরিসর বাড়ানোর পক্ষে মত দিচ্ছে ফ্রান্স।’ তিনি বলেন, ‘জার্মানি, জাপান, ভারত ও ব্রাজিলের স্থায়ী সদস্য হওয়া উচিত। সঙ্গে আফ্রিকার দুটি দেশ, যা তারা নিজেরাই নির্ধারণ করবে।’
দীর্ঘদিন ধরেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ চেয়ে এসেছে ভারত। সম্প্রতি এই দাবি আরও জোরালো হয়েছে। ভারতকে পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও একই ধরনের যুক্তি দেন। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে ভারতের দাবির পক্ষে সমর্থন জানান যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী। স্টারমার বলেন, জাতিসংঘের সংস্কার প্রয়োজন। নিরাপত্তা পরিষদে আরও বেশি দেশের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে হবে। বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদে পাঁচ স্থায়ী সদস্য ও ১০ অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে। অস্থায়ী সদস্য নিজ নিজ অঞ্চল থেকে দুই বছরের মেয়াদে নির্বাচিত হন। স্থায়ী সদস্যরা হলো রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র। স্থায়ী সদস্যরা নিরাপত্তা পরিষদের যে কোনো সিদ্ধান্তে ভেটো দিতে পারে।
স্টারমার বলেন, ‘আমরা চাই কাউন্সিলে আফ্রিকা থেকে স্থায়ী সদস্য অন্তর্ভুক্ত হোক। পাশাপাশি ব্রাজিল, ভারত, জাপান ও জার্মানিকেও স্থায়ী সদস্য করা উচিত। সঙ্গে নির্বাচিত সদস্যদের জন্য আসন বাড়ানো প্রয়োজন।’ গত সপ্তাহে জো বাইডেনও ভারতের পক্ষে বক্তব্য দেন। ওয়াশিংটনে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনায় বাইডেন উল্লেখ করেন, তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের সংস্কার চান।
তিনি দেখতে চান, নিরাপত্তা পরিষদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সংগঠনে ভারতের অংশগ্রহণ বাড়ুক। নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্য পদের দাবি পূরণে সহায়তা করার আশ্বাস দেন বাইডেন।
বেশ কয়েক দশক ধরে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য পদের দাবি জানিয়ে এসেছে ভারত। নয়াদিল্লির দাবি, ১৯৪৫ সালে গঠিত ১৫ জাতির কাউন্সিল যুগের চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়। ২১ শতকের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন নেই এই সংগঠনে।