ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে ব্রাজিলে; ৩০ শহরে উচ্চ সতর্কতা জারি
কয়েক বছর আগে ব্রাজিলে অবস্থিত পৃথিবীর ফুসফুস নামে খ্যাত অ্যামাজন বনে ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। এতে পুড়ে যায় লাখ লাখ গাছ। লাতিন আমেরিকার এই দেশটিতে ফের ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। দাবানলে এখন পর্যন্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৩০টি শহরে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
এছাড়া দাবানলের কারণে দেশটির বহু মহাসড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। আজ রবিবার (২৫ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দাবানল মোকাবিলা করার জন্য ব্রাজিলের সাও পাওলো প্রাদেশিক সরকার একটি ক্রাইসিস ক্যাবিনেট গঠন করেছে। এছাড়া দাবানলের কারণে ব্রাজিলের ৩০টি শহরকে উচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে।
আগুনে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আগুনের জেরে সৃষ্ট ধোঁয়া এক ডজন মহাসড়কে যান চলাচল ব্যাহত করেছে। এছাড়া রাজধানী সাও পাওলো শহরটি ধূসর কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে।
বিবিসি বলছে, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং কম আর্দ্রতা সেখানে বিপজ্জনক আগুনের পরিস্থিতি তৈরি করছে। এই অঞ্চল দীর্ঘকাল ধরে খরার মধ্যে রয়েছে। স্থানীয় সরকার জানিয়েছে, উরুপেস শহরের একটি শিল্প কারখানার দুই কর্মচারী শুক্রবার আগুন নেভানোর সময় মারা গেছেন। তবে এই ঘটনার আরও বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়নি বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
ব্রাজিল সম্প্রতি প্যান্টানাল জলাভূমিতে বিশাল দাবানল এবং রিও গ্র্যান্ডে ডো সুল প্রদেশে বিশাল বন্যার সম্মুখীন হয়েছে। প্রাদেশিক সরকার সতর্ক করে বলেছে, বনের দাবানল দমকা বাতাস থেকে আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং সম্ভাব্য প্রাকৃতিক গাছপালাগুলোর পাশাপাশি বিশাল এলাকাও ধ্বংস করতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়াতে দেওয়া এক বার্তায় গভর্নর টারসিসিও ডি ফ্রেইটাস বলেছেন: ‘বর্তমানে আমাদের ৩০টি শহরে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের জন্য উচ্চ সতর্কতা জারি রয়েছে এবং আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি।’
পরে পৃথক এক পোস্টে তিনি লিখেছেন: ‘সাও পাওলো একটি কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়েছে এবং বিভিন্ন বাহিনীর সাথে কাজে যোগ দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে এবং মানুষকে নিরাপদ রাখতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
তিনি আরও বলেন, ‘পিরাসিকাবা, বারিনহা, সেরতাওজিনহো এবং রিবেইরো প্রেটোর মতো সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে আমরা দিনভর মাঠে ছিলাম। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আমরা বিশ্রাম নেব না।’
এদিকে রাজধানী সাও পাওলো ঘন ধূসর কুয়াশায় ঢেকে গেছে। সরকার এক বিবৃতিতে সতর্ক করে বলেছে, ‘দমকা বাতাসের সাথে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এসব আগুন ঘন এবং বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গত করে যা পরিবেশ এবং মানব স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে এবং এর ফলে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা ও কার্ডিওভাসকুলার রোগ হয়।’
বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ৪ লাখ ৮০ হাজার বাসিন্দার শহর সাও জোসে ডো রিও প্রেটোতে পরিস্থিতি গুরুতর। এই শহরে সাম্প্রতিক দিনগুলিতে ৩৩৫টিরও বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং এসব অগ্নিকাণ্ডের সময় স্কুল বন্ধ করতেও বাধ্য হয়েছিল কর্তৃপক্ষ।
গত জুন মাসে প্যান্টানাল জলাভূমিতে বিশাল দাবানলের মতো সম্প্রতি ব্রাজিল বেশ কয়েকটি চরম দুর্যোগের শিকার হয়েছে। গত জুনের ওই দাবানলের সময় জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, এই বছরের দাবানল মৌসুমের আগেই শুরু হয়েছে এবং এটি আগের বছরের তুলনায় ছিল আরও তীব্র।