রাফায় সামরিক অভিযান বন্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় প্রত্যাখ্যান ইসরায়েলের
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় সামরিক অভিযান বন্ধে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে জাতিসংঘভিত্তিক আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে)। তবে আন্তর্জাতিক আদালতের দেওয়া এই রায় প্রত্যাখ্যান করেছে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা।
সেই সঙ্গে মন্ত্রিসভা তারা জানিয়েছে, গাজায় ক্ষমতাসীন সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে ধ্বংস করা এবং গোষ্ঠীটির কব্জায় থাকা জিম্মিদের উদ্ধারে তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় হামাস-ইসরায়েলি বাহিনীর যুদ্ধ বাঁধার প্রায় দু’মাস পর গত ডিসেম্বরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে আদালতে মামলা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। মামলার কার্যক্রমের মধ্যেই রাফায় অভিযান স্থগিতের আর্জি জানিয়ে আবেদন করেছিল বাদিপক্ষ। সেই আবেদনের জবাবে শুক্রবার (২৪ মে) রাফায় সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দিয়ে রায় দেন আদালত।
শুক্রবার জাতিসংঘ আদালতের এই রায়ের পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এই রায়কে ‘ভুয়া, ভয়ানক এবং ন্যায়বিচার পরিপন্থী’ উল্লেখ করে বলা হয়, ‘প্রত্যেক দেশেরই আন্তর্জাতিক আইন ও মূল্যবোধ অনুসরণের ভিত্তিতে নিজেদের নাগরিক ও সীমানা রক্ষার অধিকার রয়েছে এবং ইসরায়েল ঠিক তা ই করছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘রাফার বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ব্যাপক শারীরিক ক্ষয়ক্ষতি এড়িয়ে সেখানে অভিযান চালাতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রধান লক্ষ্য সেখানকার শত্রু ঘাঁটিগুলোতে অভিযান চালানো। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ক্ষতিসাধন নয়।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতামার বেন-গিভির, যিনি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিশেষ আস্থাভাজন এবং ইসরায়েলে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শরিক রিলিজিয়াস জায়োনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতা জাতিসংঘ আদালতের রায়কে সরকারি প্রত্যাখান করেছেন। শুক্রবার আদালতের রায়ের পর ইসরায়েলের ফার্স্ট প্রাইম মিনিস্টার ডেভিড বেন গুরিয়ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক বার্তায় বলেছেন, ‘ইহুদিদের ভবিষ্যত ইহুদিদের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করবে। অ-ইহুদিদের সিদ্ধান্তের ওপর নয়।’
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জন মানুষকে হত্যা করে হামাস যোদ্ধারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় ২৪২ জনকে।
জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী, যা এখনও চলছে। গত সাত মাসের যুদ্ধে গাজায় ইতোমধ্যে সাড়ে ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৮০ হাজার। হতাহতদের ৫৬ শতাংশই নারী এবং শিশু। এছাড়া প্রায় পুরো গাজাকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে দখলদার ইসরায়েল। এই ধ্বংসস্তুপের নিচে আরও ১০ হাজারের মতো ফিলিস্তিনির মরদেহ পচছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
রাফা শহরটির অবস্থান মিসর-গাজা সীমান্তে। ইসরায়েলি অভিযানের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে প্রাণ বাঁচাতে গত কয়েক মাসে গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে রাফায় জড়ো হয়েছেন হাজার হাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনি। গত এপ্রিলে প্রথম রাফায় সামরিক অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
এদিকে, চলমান এই যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরায়েলকে ব্যাপকভাবে সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই যুক্তরাষ্ট্রও গাজায় সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে। এমনকি ইসরায়েল এ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তিকে আমলে না নেওয়ায় সেখানে অস্ত্র সরবরাহ স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যা এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি।
সাধারন বেসামরিক ইসরায়েলের একটি উল্লেখযোগ্য অংশও রাফায় সারিক অভিযানের পক্ষে। যে কোনো মূল্যে তারা হামাসের কব্জায় থাকা জিম্মিদের উদ্ধার চান।
তেল আবিবের একটি স্টার্ট আপ বিনিয়োগ কোম্পানিতে চাকরিরত ৩৯ বছর বয়সী আদি লেভানন রয়টার্সকে জাতিসংঘ আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, এই রায় হাস্যকর। কারণ আমাদের নারী, পুরুষ, কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক লোকজন এখন জিম্মি অবস্থায় রয়েছে। তাদেরকে উদ্ধার করা সবচেয়ে জরুরি। একটি দেশ যখন তার নাগরিকদের উদ্ধার করে ফিরিয়ে আনতে চাইছে, তখন তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা নিরর্থক।’
সূত্র: রয়টার্স