রাফাহ ক্রসিং দখলে নিলো ইসরায়েলী সেনারা
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামলা বন্ধে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য মরিয়া হয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতার। এই তিন দেশের মধ্যস্থতাকারীরা যে প্রস্তাব দিয়েছেন তাতে ইতোমধ্যে সম্মতি দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা–সিআইয়ের প্রধান বিল বার্নস। তিনি সোমবারই কাতারের দোহা থেকে জেরুজালেমে পৌঁছেছেন।
এদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন টেলিফোনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন। বাইডেন ইসরায়েলের গাজার রাফায় স্থল অভিযানের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। পাশাপাশি হামাসের হাতে জিম্মি ব্যক্তিদের রক্ষায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি সর্বোত্তম পথ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। তবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হয়ে উলটো গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত রাফা ক্রসিংয়ের দখল নিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে আইডিএফ।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গত রাতে আইডিএফের সেনারা রাফা ক্রসিংয়ের গাজা অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এই মুহূর্তে ক্রসিংয়ের যাবতীয় অপারেশনাল কাজ নিয়ন্ত্রণ করছে আমাদের সেনারা ক্রসিংয়ের আশেপাশে সন্ত্রাসীদের কোনো গোপন আস্তানা রয়েছে কি না— তার অনুসন্ধান করছে। এই অনুসন্ধান শুধু ক্রসিংয়ের গাজা অংশে চলছে।’
গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত রাফা ক্রসিংয়ের একপাশে গাজা, অন্যপাশে মিসরের সিনাই উপদ্বীপ। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের হামলা এবং তার জবাবে গাজায় আইডিএফের অভিযান শুরুর আগ পর্যন্ত এই সীমান্তপথটিকে গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘লাইফ লাইন’ বলে বিবেচনা করা হতো। কারণ এই সীমান্তপথ দিয়েই খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানিসহ জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সব সামগ্রীর সরবরাহ প্রবেশ করত গাজায়।
তবে ৭ অক্টোবরের থেকে সীমান্তপথটি বন্ধ করে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। মাঝে মাঝে ত্রাণের গাড়ি প্রবেশের জন্য খুললেও গত ৭ মাসের অধিকাংশ সময় বন্ধই থেকেছে রাফাহ ক্রসিং।
এদিকে পুরা উপত্যকা জুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর ব্যাপক বোমাবর্ষণ থেকে বাঁচতে রাফাহ শহরে জড়ো হয়েছিলেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। অনেকে ক্রসিংয়ের কাছাকাছি এলাকায় তাঁবু গেড়ে অস্থায়ীভাবে ব বসবাসও করছিলেন।
এক মাসেরও বেশি সময় আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, রাফায় সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা। তবে নেতানিয়াহু এই ঘোষণা দেওয়ার পরপরই এতে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পর্যন্ত একাধিকবার রাফায় সামরিক অভিযান চালানের ব্যাপারে নেতানিয়াহুকে নিষেধ করেছিলেন।
ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান শুরু হলে রাফায় বেসামরিক নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে এবং যুদ্ধে মিরে ছড়িয়ে পড়বে— এমন আশঙ্কা থেকেই এই নিষেধ করেছিলেন বাইডেন। কিন্তু নেতানিয়াহু, তার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা এবং আইডিএফ সেই নিষেধে কর্ণপাত করেনি।
সোমবার সকাল থেকে রাফায় বিমান অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। সেই অভিযানে ১৬ জন নিহত হন। অভিযান শুরুর আগে অবশ্য এক লাখেরও বেশি মানুষকে রাফাহ থেকে সরিয়ে দিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী।
‘বেসামরিক লোকজন নিরাপদ স্থানের উদ্দেশে রাফাহ ত্যাগের পর সেখানে অভিযান চালিয়েছে সেনারা,’ বলা হয়েছে আইডিএফের বিবৃতিতে।
সূত্র : এএফপি, আল জাজিরা