সোমালি জলদস্যুদের কাছ থেকে জাহাজ উদ্ধারের দাবি ভারতীয় নৌবাহিনীর

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০২৪, ১০:৪৬ AM

বেশ কয়েক বছর স্তিমিত থাকলেও সম্প্রতি নতুন করে ব্যাপক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে সোমালি জলদস্যুদের। গত মঙ্গলবার এই জলদস্যুরা বাংলাদেশি একটি জাহাজ ছিনতাই করে ২৩ জন নাবিককে জিম্মি করেছে।

লোহিত সাগরে হুথিদের নিয়ে আন্তর্জাতিক বাহিনীগুলো বেশি ব্যস্ত থাকার সুযোগে ভারত মহাসাগরের গালফ অফ এডেনে তারাআবার মাথাচাড়া দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

ইতালিয়ান ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে ১৯৬০ সালে সোমালিয়ার জন্ম। পরের দুই দশকের বেশি সময় যুদ্ধবিগ্রহে বিধ্বস্ত সোমলিয়াতে কার্যকর কোন সরকার ছিল না।

এই সময়টাতে আফ্রিকার মধ্যে দীর্ঘতম উপকূল সমৃদ্ধ দেশটির জলসীমার নিরাপত্তায় কোন কোস্টগার্ড বা বাহিনী ছিল না।

এতে এই অঞ্চলে বিদেশি মাছ ধরা নৌযানের উপস্থিতি ক্রমশ বাড়তে থাকে। এতে স্থানীয় জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। ফলে, তারা দস্যুবৃত্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে।

ইন্ডিয়ান ওশান কমিশনের সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতেও ওই সময়ের দস্যুতার নেপথ্যে এই কারণ হিসেবে দেখা হয়েছে।

পূর্ব আফ্রিকার উপকূলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা বিধানে কাজ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী বা ইইউন্যাভ ফর আটালান্টা। তাদের মতে, গত বছরের নভেম্বরে থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে সোমালি উপকূলে অন্তত ১৪ টি জাহাজ হাইজ্যাক করা হয়েছে।

এর মধ্যে ইরানের পতাকাবাহী একটি মাছ ধরার নৌকা এবং লাইবেরিয়ান-পতাকাবাহী সেন্ট্রাল পার্ক নামের একটি জাহাজের জেলে ও নাবিকদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

সেন্ট্রাল পার্কের উদ্ধার তৎপরতায় মার্কিন নৌবাহিনী জড়িত ছিল। পরে তারা জানায়, এটা স্পষ্টতই দস্যুতা এবং আক্রমণকারীরা সম্ভবত সোমালিই ছিল।

ডিসেম্বরে এমভি রুয়েন নামে মাল্টার পতাকাবাহী একটি জাহাজ হাইজ্যাক করা হয়। সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছ থেকে মাল্টার পতাকাবাহী একটি বাণিজ্যিক জাহাজ উদ্ধার করেছে ভারতের নৌবাহিনী। এ ঘটনায় জাহাজটিতে থাকা ৩৫ জলদস্যুর সবাই আত্মসমর্পণ করেছেন। উদ্ধার করা করা হয়েছে ১৭ নাবিককে। শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের এক পোস্টে এ তথ্য জানায় তারা।

এমভি রুয়েন নামের বাল্ক ক্যারিয়ারের এই জাহাজ মাল্টার পতাকাবাহী। গত ডিসেম্বরে এটি ছিনতাই হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এই জাহাজ থেকেই জলদস্যুরা বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে নিজেদের দখলে নিয়েছে।

ভারতীয় নৌবাহিনী জানিয়েছে, গত শুক্রবার প্রথম তারা এমভি রুয়েনকে আটক করতে সক্ষম হয়। পরে জলদস্যুদের সবাইকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। একপর্যায়ে জাহাজটিতে থাকা ৩৫ জলদস্যুর সবাই তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। জাহাজটিতে কোনো ধরনের অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ বা মাদক রয়েছে কি না, তা তল্লাশি করে দেখা হয়।

এই অভিযানে ভারতীয় নৌবাহিনীর বিশেষ কমান্ডোরাও অংশ নেন বলে বাহিনীর পক্ষে একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন। এই অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও নাবিকদের নিরাপত্তার জন্য ভারতীয় নৌবাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যোগ করেন তিনি।

এদিকে, গত মঙ্গলবার ২৩ নাবিকসহ ভারতীয় মহাসাগর থেকে বাংলাদেশী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে নিজেদের দখলে নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। তারা জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন নৌবাহিনী ধারণা করছে, এমভি আবদুল্লাহকে ছিনতাই করতে এমভি রুয়েনকে ভারত মহাসাগরে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছিল সোমালিয়ার জলদস্যুরা।