জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কড়া সমালোচনা করলেন এরদোগানের
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে গণহত্যা করা হচ্ছে। ধ্বংস করা হয়েছে গাজার অর্ধেকের বেশি অবকাঠামো। অবরুদ্ধ এই উপত্যকটিতে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব আনা হয়। কিন্তু একমাত্র দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেওয়ায় সেই প্রস্তাব পাস হয়নি। অর্থাৎ সব দেশ যুদ্ধবিরতি চাইলেও যুক্তরাষ্ট্র একাই আটকে দিয়েছে সেটি। এতেই ক্ষেপে যান তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন এবং রাশিয়ার হাতে এই ভেটো ক্ষমতা আছে। কোনো দেশ যদি কারও বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব তোলে সেটিতে এই ৫ দেশের যে কেউ ভেটো দিলে সেই প্রস্তাব আর পাস হয় না। আর এই নিয়মেরই সংস্কার চান তুর্কি প্রেসিডেন্ট।
এরদোগান বলেন, অধিকাংশ দেশের সমর্থন সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের কারণে এই প্রস্তাব পাস করা যায়নি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, দু-একটি দেশের বাগড়া দেওয়ার কারণে অধিকাংশ দেশের মতামতকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। শনিবার রাজধানীর ইস্তাম্বুলে মানবাধিকার সম্মেলনে এ কথা বলেন এরদোগান।
এরদোগান প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সম্মিলিত দাবি শুধু মার্কিন ভেটো দ্বারা প্রত্যাখ্যান করা হয়। এটা কী ন্যায় বিচার?’। ‘এই বৈষম্য বিলোপ করতে হলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে সংস্কার করতে হবে।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন, বিশ্ব এখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে সব আশা ও প্রত্যাশা হারিয়ে ফেলেছে। এই পরিষদের সংস্কার প্রয়োজন।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলা বন্ধে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করে জাতিসংঘ। সেই ধারাবাহিকতায় সবশেষ শুক্রবার অনতিবিলেম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। জাতিসংঘ মহাসচিবের উত্থাপিত এ প্রস্তাবে ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দেয় বাংলাদেশ। এছাড়াও যুদ্ধবিরতির পক্ষে প্রায় ১০০ দেশ তাদের সমর্থন জানায়।
স্থানীয় সময় শনিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করে তারপর জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোরিও গুতেরেস সংস্থাটির ধারা-৯৯ এর ক্ষমতাবলে নিরাপত্তা পরিষদে এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন। সেখানে ১৫ সদস্যের মধ্যে একমাত্র ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র এবং ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে যুক্তরাজ্য। আর বাকি সদস্যরা তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান নেয়।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নৃশংস হামলা শুরু করেছে দখলদার ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৩০০ জন নিহত হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮ হাজারে দাঁড়াল। আহত হয়েছে ৪৯ হাজার ৫০০ জন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুখপাত্র আশরাফ আল-কাদরা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯৭ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৫৫০ জনের বেশি।
স্থল অভিযানের পাশাপাশি গাজায় অবিরাম বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১৫ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে, হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত গাজায় তাদের অভিযান বন্ধ হবে না।