হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি এবার গণগ্রেপ্তার চালাচ্ছে ইসরায়েল
অবরুদ্ধ গাজায় হত্যাকাণ্ড চালানোর পাশাপাশি এবার গণগ্রেপ্তারও চালাচ্ছে ইসরায়েল। গ্রেপ্তারের পর একপ্রকার নগ্ন করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাদের। এমনই কিছু স্থিরচিত্র ও ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
যাদের বন্দী করা হয়েছে, তাদের সবার পরিচয়ের ব্যাপারে সিএনএন নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে অধিকাংশের পরিবারের সদস্য বা সহকর্মীরা বন্দী করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ভিডিও বা স্থিরচিত্রগুলো থেকে দেখা গেছে, বন্দীদের কেবল আন্ডারওয়্যার পরিয়ে, চোখে পট্টি বেঁধে একটি সামরিক যানের মেঝেতে ফেলে কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তবে তাঁদের কবে বন্দী করা হয়েছে বা কেন বন্দী করা হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিন্তু বেশ কয়েকজন ব্যক্তির পরিবার ও সহকর্মীরা তাঁদের বন্দী হওয়ার দিন-তারিখও জানিয়েছে। সিএনএন ওই সব ব্যক্তির অনেকের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছে যে, তাঁদের হামাস বা কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভাভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইউরো-মেডিটারেনিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটর গত বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি বন্দীদের একটি চিত্র পোস্ট করেছে। সংস্থাটি তাদের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে আটক করে এবং গুরুতরভাবে নির্যাতন করেছে।’
সংস্থাটি আরও বলেছে, ‘আমরা খবর পেয়েছি, ইসরায়েলি বাহিনী ডাক্তার, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, বয়স্ক পুরুষসহ বাস্তুচ্যুত লোকদের বিরুদ্ধে এলোপাতাড়ি ও নির্বিচার গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করেছে।’ এ বিষয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এদিকে লন্ডন থেকে প্রকাশিত প্যান আরব সংবাদমাধ্যম আল-আরাবি আল-জাদীব বা নিউ আরব জানিয়েছে, তাদের এক প্রতিবেদক ও তাঁর পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যও রয়েছে ইসরায়েলের বন্দী করা ওই লোকদের মাঝে। তারা এক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘আজ (গতকাল) বৃহস্পতিবার, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী গাজায় দ্য নিউ আরব ব্যুরোর পরিচালক, আমাদের সহকর্মী দিয়া আল-কাহলোতকে বাইত আল-লাহিয়ার বাজার থেকে তার ভাই, আত্মীয় এবং অন্যান্যদের সঙ্গে গ্রেপ্তার করেছে।’
নিউ আরবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দখলদারেরা ইচ্ছাকৃতভাবে গাজাবাসীকে তাদের জামাকাপড় খুলে ফেলতে বাধ্য করে তাদের তল্লাশি করেছে এবং অজানা গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার আগে গ্রেপ্তারের সময় তাদের অপমান করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা আমাদের জানিয়েছেন। ছড়িয়ে পড়া ও ছবি ও ভিডিও ক্লিপ থেকে দেখা গেছে—যেখানে ইসরায়েলিরা অপরাধমূলক ও অপমানজনক পদ্ধতি ব্যবহার করে কয়েক ডজন গাজাবাসীকে গ্রেপ্তার করছে।’
শুধু গাজা নয়, অবরুদ্ধ পশ্চিম তীরেও গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে দখলদার ইসরায়েল। গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ৩ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটি।
প্রসঙ্গত, ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৭ হাজার ১৭৭ জনে দাঁড়িয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য দিয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ৪৬ হাজারের অধিক মানুষ।