'বরং বোমার আঘাতে তারা আমাদের করল জর্জর/ সে খবর পায়নি তোমাদের শহর'

১৫ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি আমেরিকান র‍্যাপার আব্দুল মতিনের একটি গান সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। গানটিতে সে গাজায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ ও ফিলিস্তিনিদের অসহায়ত্বের কথা বলা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার গানগুলো নতুন করে ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানে তাকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন ব্যবহারকারীরা।

আবদুল মতিনের র‍্যাপ গানের কথাগুলো খুব শক্তিশালী। তার গানে তাকে বলতে শোনা যায়, কীভাবে গাজায় বোমাবর্ষণের তীব্র বিস্ফোরণের শব্দে রাতে তার ভাই-বোনেরা কেঁপে ওঠে, কীভাবে তাদের মা সেটাকে বাজি বলে সন্তানদের সান্ত্বনা দিতে চান। তার গানের কথা জানায়, তার দাদা-দাদিকে বাধ্য হয়ে বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল সেই ১৯৪৮ সালে। 'নিজের একমাত্র বাড়ি থেকে বাধ্য হয়ে চিরতরে বেরিয়ে আসাটা' কেমন লাগে তা একবার 'ভাবতে' শ্রোতাদের আহ্বান জানায় তার গানের কথাগুলো।

২০২১ সালে কর্ক বিটমেকারের সঙ্গে একত্রে 'শাউটিং অ্যাট দ্য ওয়াল' প্রকাশ করে আবদুল। তখন তার বয়স কেবল ১৩। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই গানটি ভাইরাল হয়, দুই দিনের মাথায় ২৭ লাখ মানুষ গানটি দেখেন।

সেই গান ডিজে খালেদ ও বেলা হাদিদের মতো সেলিব্রিটিরাও তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছিলেন।

র‍্যাপটি লিখেছিল আবদুল নিজেই। গানের ভিডিও রেকর্ড করেছিলেন তার বাবা। কর্ক প্রডিউসার গ্যারি ম্যাককার্থি (জিএমসি বিটস) গানের মিউজিক তৈরি ও মিক্স করেছিলেন। ২০১৯ সাল থেকে আবদুলকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি।

আবদুলের গানের নাম 'দেয়ালের দিকে চিৎকার' — কারণ সে নিরাশ, জানে তার এত আবাহনেও গাজার পালটাবে না একদমই। তাকে পরের দিনটাও বোমা হামলার ভয়ে কাটাতে হবে। তার বাবাকে কাজের জন্য বাইরে গেলে বাড়িতে তারা সবাই সারাক্ষণ উৎকণ্ঠায় থাকবে।

গত ফিফা বিশ্বকাপে দোহায় প্রথম শো করে এমসি আবদুল। 'শাউটিং অ্যাট দ্য ওয়াল'-এর আগে আবদুল 'প্যালেস্টাইন' শীর্ষক আরেকটি র‍্যাপ প্রকাশ করে। এমিনেমের 'ক্লিনিং আউট মাই ক্লজেট'-এর বিটের ওপর তৈরি এ র‍্যাপের সাফল্য নজর কাড়ে এমপায়ার নামক একটি কোম্পানির।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রেকর্ড লেবেল ও মিউজিক ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এমপায়ার ফিলিস্তিনি-মার্কিনী উদ্যোক্তা গাজি শামি ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। কোম্পানিটি আবদুলের সঙ্গে চুক্তি করে।

আবদুলের গানের প্রতিটি কথাই প্রতিবাদী। কিন্তু নিজেকে সে রাজনৈতিক শিল্পী হিসেবে ভাবে না।

তার ভাষায়, 'আমার বার্তা শান্তি নিয়ে। রাজনৈতিক বিষয় নয়।

'আমি জানি না রাজনীতি কী জিনিস – আমি যা বলতে চাইছি তা হলো, আমি চাই বিশ্বের সব শিশু শান্তিতে, মিলেমিশে থাকুক। আর আমি চাই ফিলিস্তিনের শিশুদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠতে।'

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর তিন–চারদিন পর আবদুল জানিয়েছে, তার পরিবার গাজায় আটকে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইনস্টাগ্রাম-এ এক পোস্ট সে জানায়, তার এক বন্ধু এ যুদ্ধে নিহত হয়েছে।

'এ মুহূর্তে আমি যুক্তরাষ্ট্রে আমার স্বপ্নের জীবনযাপন করছি। কিন্তু একই সময় গাজায় আমার পরিবার দুঃস্বপ্নের মতো দিন পার করছে। এখানে থেকে আমার নিজেকে দোষী লাগছে।'

পরিবারের সদস্যরা গাজায় বিশুদ্ধ পানি, বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছে না আক্ষেপ করে আবদুল তার পোস্টে আরও বলে, পারলে সেও গাজায় চলে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে থাকত।

টুপাক শাকুর, এমিনেম, ডিজে খালেদের ভক্ত আবদুলের কাছে ফিলিস্তিনের প্রাণবন্ততা তার গানের প্রেষণা, তার এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।

তোমাদের কথা ছিল স্কুল তৈরির, নয় কারাঘর
বরং বোমার আঘাতে তারা আমাদের করল জর্জর
সে খবর পায়নি তোমাদের শহর

এমসি আবদুলের গান এভাবেই বলে যাচ্ছে ফিলিস্তিনিদের যন্ত্রণার কথা।