ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে: হিজবুল্লাহ প্রধান
লেবাননের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহের প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ জানিয়েছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলবে। দেশটির বিরুদ্ধে যে রণাঙ্গন চালু হয়েছে তা সক্রিয় থাকবে। তিনি আরও বলেন, হিজবুল্লাহর সশস্ত্র শাখা নতুন অস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল শনিবার লেবাননের একটি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে হাসান নাসরুল্লাহ এই ঘোষণা দেন। গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল সংঘাত শুরুর পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বার কথা বললেন নাসরুল্লাহ। প্রথমবারের ভাষণে নাসরুল্লাহ জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। পরে অবশ্যই তিনি তাঁর সেই বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ওই ভাষণে নাসরুল্লাহ বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরে হিজবুল্লাহ অস্ত্রের ধরনগত উন্নতির পাশাপাশি সংখ্যাগত উন্নতিও করেছে। পাশাপাশি বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতাও বেড়েছে।’ ভাষণে তিনি হিজবুল্লাহর ভান্ডারে বুরকান সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত হয়েছে বলেও জানান। তিনি বলেন, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ৩০০ থেকে ৫০০ কেজি পর্যন্ত বিস্ফোরক বহনে সক্ষম। এ সময় তিনি হিজবুল্লাহর দখলে বিপুল পরিমাণ ড্রোন রয়েছে বলেও জানান।
নাসরুল্লাহ জানান, হিজবুল্লাহ সম্প্রতি ইসরায়েলি শহর কিরয়াতে আঘাত হেনেছে। তিনি বলেন, এই ফ্রন্ট সক্রিয় থাকবে। এর সহজ অর্থ হলো, ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহর সংঘাত চলতে থাকবে। নাসরুল্লাহর এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত হুমকি দিয়েছেন যে, বেশি বাড়াবাড়ি করলে লেবাননের রাজধানী বৈরুতও গাজার পরিণতি বরণ করবে।
গতকাল শনিবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৯১ ডিভিশন পরিদর্শনকালে গ্যালান্ত এই মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি ইসরায়েলে হামলা না চালাতে হিজবুল্লাহকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, গোষ্ঠীটি বড় ধরনের ভুল করার খুব কাছে। তিনি আরও বলেন, হিজবুল্লাহ যদি কোনো ভুল করে, তার মূল্য চোকাতে হবে লেবাননের সাধারণ মানুষকে।
গ্যালান্ত বলেন, ‘হিজবুল্লাহ লেবাননকে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধের দিকে টেনে আনছে এবং এটি করার মাধ্যমে তারা ভুল করছে। তারা যদি এমন কোনো ভুল করেই, তবে প্রথমেই তার মূল্য চোকাতে হবে লেবাননের সাধারণ জনগণকে।’ এ সময় তিনি লেবাননের রাজধানী বৈরুতকেও গাজার পরিণতি দেওয়া হবে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা গাজায় যা করছি, আমরা জানি এই কাজগুলো কীভাবে বৈরুতে করতে হবে।’
গত ৭ অক্টোবর গাজার স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের আক্রমণে ইসরায়েলের ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি নিহত হয়। এ ছাড়া হামাস জিম্মি করেছে অন্তত ২৪০ জন। এ হামলার পরপরই গাজায় পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েল।
গাজার অমানবিক ও বর্বর হামলা থেকে হাসপাতাল, স্কুল, বেসামরিক ঘর-বাড়ি এমনকি শরণার্থী শিবিরও রক্ষা পাচ্ছে না। ইতোমধ্যে তারা ৩২ হাজার টন বোমা ফেলেছে গাজায়। গাজার প্রায় অর্ধেক ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই শিশু। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার শিশু নিহত হয়েছে ইসরায়েলি হামলায়। এছাড়া ৩ হাজারের মতো নারী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও প্রায় ২৭ হাজার মানুষ। ঘরছাড়া হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ ফিলিস্তিনি।