ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় শিশু ও নারী হত্যা বন্ধ করতে হবে: ম্যাক্রোঁ

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:২১ AM

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বেসামরিক মানুষের ওপর বোমাবর্ষণের কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি অবিলম্বে সেখানে বোমা হামলা বন্ধ করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যাক্রোঁ এসব কথা বলেন।

গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার জেরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় শিশু ও নারী হত্যা বন্ধ করতে হবে।

ম্যাক্রোঁ বলেন, গাজায় এভাবে বোমা নিক্ষেপের কোনো 'যৌক্তিকতা নেই'। যুদ্ধবিরতি হলে ইসরায়েলই লাভবান হবে। 

ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি গাজায় চলমান বোমা হামলা বন্ধের আহ্বান জানান।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের নেতারা এ যুদ্ধবিরতির আহ্বানে যোগ দেবেন কি না জানতে চাইলে ম্যাক্রোঁ বলেন, 'আমি আশা করি তারা তা করবে।'

তিনি জোর দিয়ে বলেন, হামাসের 'সন্ত্রাসী' কর্মকাণ্ডে ফ্রান্স 'স্পষ্টভাবে নিন্দা' জানায়। 

ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর মতো ফ্রান্সও হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে গণ্য করে।

এদিকে ইসরায়েল বলছে, তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনেই সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাচ্ছে। এছাড়া বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের সংখ্যা কমাতে হামলার আগে তাদের সতর্ক করা এবং এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলার মতো পদক্ষেপ নিয়েছে।

গাজায় মানবিক সহায়তার বিষয়ে প্যারিসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের একদিন পর ম্যাক্রোঁ বলেন, গাজার বিষয়ে সম্মেলনে উপস্থিত সব সরকারি ও বিভিন্ন সংস্থার 'স্পষ্ট উপসংহার' হলো 'মানবিক বিরতি ছাড়া অন্য কোনো সমাধান নেই'। যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলে সব বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার সুযোগ তৈরি হবে। 

ম্যাক্রোঁ বলেন, 'আজ বেসামরিক নাগরিকরা বোমা হামলার শিকার হচ্ছে। হামলায় শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা নিহত হচ্ছে। এ হামলার কারণ ও বৈধতা কোনোটিই নেই। তাই আমরা ইসরায়েলকে হামলা থামানোর আহ্বান জানাই।'

এ হামলায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হচ্ছে কি না সেটি বিচার করার দায়িত্ব তার কাজ নয় বলেও জানান ম্যাক্রোঁ। 

ফরাসি প্রেসিডেন্টের মন্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, রাষ্ট্রগুলোর উচিত হামাসকে নিন্দা করা, ইসরায়েলকে নয়।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'হামাস গাজায় আজ যে অপরাধ করছে, সেটি আগামীকাল তারা প্যারিসে করবে, তারপর নিউ ইয়র্কে, তারপর পৃথিবীর অন্য কোনো জায়গায়।'

বার্ষিক প্যারিস পিস ফোরামের প্রথম দিন শেষে বিবিসিকে দেওয়া এ সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট মাখোঁ আরো কিছু বিষয় তুলে ধরেন। সহিংসতার আশঙ্কা মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফ্রান্সেও ছড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ করে ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে সব ধর্ম ও বিশ্বাসের নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

গাজার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে গিয়ে ম্যাক্রোঁ বলেন, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আকস্মিক হামলার 'স্পষ্ট নিন্দা' জানায় ফ্রান্স। হামাসের সশস্ত্র বন্দুকধারীরা এক হাজার দুই শরও বেশি মানুষ হত্যা করেছে। তারা ২৪০ জনকে ধরে নিয়ে গিয়ে জিম্মি করেছে।

তিনি বলেন, 'আমরা ইসরায়েলের কষ্টটা বুঝি। কিন্তু গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলার কোনো 'যৌক্তিকতা নেই'।

গাজায় ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে কি না জানতে চাইলে এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি ম্যাক্রোঁ। তিনি শুধু বলেন, 'আমি বিচারক নই। আমি একটি রাষ্ট্রের প্রধান।'

তিনি যোগ করেন, হামলার শিকার হওয়ার মাত্র এক মাস পর এভাবে ইসরায়েলের সমালোচনা করা ঠিক হবে না। তবে তিনি আত্মরক্ষার জন্য গাজায় ইসরায়েলের চলমান বোমা হামলার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন।

গাজায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ১১ হাজার ৭৮ জন মানুষ নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৫ হাজার জনেই শিশু। এছাড়া নারী রয়েছে প্রায় ৩ হাজার। আহত হয়েছেন আরও ৩৫ হাজারের অধিক মানুষ। ঘরছাড়া হয়েছে ১৫ লাখ মানুষ।