গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল: আইএজিএস
-1020927.jpg?v=1.1)
অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে গণহত্যাবিষয়ক শীর্ষ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন আইএজিএস। জাতিসংঘ সনদের আলোকে এ অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে একটি প্রস্তাবও পাস করেছে সংস্থাটি।
ওই প্রস্তাবে ইসরায়েলের ২২ মাসের যুদ্ধকালীন পদক্ষেপকে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বিশ্বের শীর্ষ গণহত্যা বিশেষজ্ঞদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলার্স (আইএজিএস) ঘোষণা করেছে যে, গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল।
জাতিসংঘের গণহত্যা সনদের আইনি সংজ্ঞার সঙ্গে ইসরায়েলের কার্যক্রম মিলে যায় বলে সোমবার এক প্রস্তাবে জানিয়েছে সংগঠনটি। তিন পাতার ওই প্রস্তাবে ইসরায়েলের ২২ মাসের যুদ্ধজুড়ে চালানো বিভিন্ন পদক্ষেপকে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিবিসি বলছে, আইএজিএস বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণহত্যা বিশেষজ্ঞদের পেশাজীবী সংগঠন এবং এখানে হলোকাস্ট বিশেষজ্ঞসহ প্রায় ৫০০ সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে ২৮ শতাংশ সদস্য ভোটে অংশ নেন এবং ভোটদানকারীদের ৮৬ শতাংশই প্রস্তাব সমর্থন করেন।
ঘোষণায় বলা হয়, ইসরায়েল সুপরিকল্পিতভাবে স্বাস্থ্য, ত্রাণ ও শিক্ষা খাতকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। ইউনিসেফের তথ্য উদ্ধৃত করে জানানো হয়, ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৫০ হাজার শিশু নিহত বা আহত হয়েছে, যা গাজার মানুষের টিকে থাকা ও পুনর্গঠনের সক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
প্রস্তাবে গাজায় সব ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করার পক্ষে ইসরায়েলি নেতাদের সমর্থন এবং অঞ্চলজুড়ে বাড়িঘর ধ্বংসের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ইসরায়েলি নেতাদের প্রকাশ্য উক্তি — যেখানে গাজার ফিলিস্তিনিদের ‘শত্রু’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, গাজাকে “চাপা দেওয়া” বা “নরকে পরিণত” করার হুমকি দেওয়া হয়েছে — তাও তুলে ধরা হয়েছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে “হামাসের মিথ্যা” ও দুর্বল গবেষণা বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং জানিয়েছে, এ প্রস্তাব “আইন পেশার জন্য লজ্জাজনক”। মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র দাবি করেন, আসলে ইসরায়েলই গণহত্যার শিকার।
ইসরায়েল অবশ্য বরাবরই গাজায় গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং বলছে, তাদের পদক্ষেপ আত্মরক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন আটক হওয়ার ঘটনাটি অপরাধ হলেও, ইসরায়েলের পাল্টা হামলা কেবল হামাসকে নয়, বরং গাজার পুরো জনগোষ্ঠীকেই টার্গেট করে চালানো হচ্ছে।
১৯৪৮ সালে হলোকাস্ট-পরবর্তী সময়ে গৃহীত জাতিসংঘের গণহত্যা সনদে বলা হয়েছে, কোনো জাতীয়, নৃতাত্ত্বিক, বর্ণ বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত অপরাধই গণহত্যা।