শির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চ্যালেঞ্জ!

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৪ PM

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সোমবার (০১ সেপ্টেম্বর) সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দেশটির ‘বৃহৎ বাজার’ কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি এমন একটি নতুন বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক কাঠামোর প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

শি জিনপিং বলেন, সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্য একটি মডেল স্থাপন করেছে। চীনের বন্দর শহর তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত দুই দিনের শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে তিনি এই কথা বলেন। সম্মেলনে ২০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান উপস্থিত ছিলেন।

শি জিনপিং বলেন, 'আমরা চাই বিশ্ব সমান ও সুসংগঠিতভাবে বহুমুখী হোক, সব দেশের জন্য খোলা অর্থনীতি হোক এবং ন্যায়সঙ্গত ও সমতার ভিত্তিতে বিশ্ব শাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠুক।'

তিনি জানান, চীন এই বছর সদস্য দেশগুলোকে ২ বিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ২৮০ মিলিয়ন ডলার) বিনামূল্যে সহায়তা দেবে এবং একটি এসসিও ব্যাংকিং গ্রুপকে ১০ বিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১.৪ বিলিয়ন ডলার) ঋণ দেবে।

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের বিশাল বাজারের সুযোগ ব্যবহার করতে হবে এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহজ করতে হবে।' তিনি জ্বালানি, অবকাঠামো, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য নেতারা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। এটি গ্লোবাল সাউথের এক বড় একতার প্রদর্শনী হিসেবে ধরা হচ্ছে।

এই নিরাপত্তা-ভিত্তিক সংস্থা আগে ছয়টি ইউরেশিয়ান দেশের একটি গ্রুপ হিসেবে শুরু হয়েছিল। সম্প্রতি এর স্থায়ী সদস্য সংখ্যা বেড়ে ১০ হয়েছে, আর ১৬টি দেশ এখন সংলাপে অংশগ্রহণকারী ও পর্যবেক্ষক হিসেবে রয়েছে।

শি জিনপিং অংশীদার দেশগুলোর উদ্দেশ্যে বলেন, 'স্নায়ু যুদ্ধের মনোভাব ও ব্লক ভিত্তিক সংঘাতের বিরোধিতা করতে হবে' এবং 'বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে সমর্থন করতে হবে'। এটি মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের দিকে ইঙ্গিত এবং এটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলো যেমন ভারতকে অযথা প্রভাবিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানী পণ্যের ওপর গত সপ্তাহে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রোববার বলেছেন, চীন বিশ্বব্যাপী বহুমাত্রিকতা বজায় রাখতে একটি 'মৌলিক' ভূমিকা পালন করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি বছরের বৃহত্তম এই শীর্ষ সম্মেলনকে আন্তর্জাতিক শাসন নিয়ে একটি বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার করবে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় অনিশ্চিত নীতি, যুক্তরাষ্ট্রের বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলো থেকে সরে আসা এবং ভৌগোলিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেওয়ার মাঝেই এই সম্মেলন আয়োজিত হয়েছে।

এই সম্মেলনকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের সুযোগ হিসেবেও ব্যবহার করেছে চীন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো চীন সফরে গিয়েছেন। তিনি ও শি জিনপিং রোববার একমত হয়েছেন, দুই দেশ প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং উন্নয়নের অংশীদার। তারা বৈশ্বিক শুল্ক অস্থিরতার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের উপায় নিয়েও আলোচনা করেছেন।