জামায়াতের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে যা বলল মিয়ানমার সরকার

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য 'স্বতন্ত্র রাজ্য' গঠনের বিষয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দেওয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমারের সামরিক সরকার। জান্তা সরকারের দাবি, এই প্রস্তাব মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ণ করেছে।

জান্তা সরকারের বিবৃতির বরাতে শুক্রবার (২ মে) এ খবর দিয়েছে মিয়ানমারের নির্বাসিত ব্যক্তিদের হাতে গড়ে ওঠা সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইরাবতী’।

ঢাকার গুলশানে গত ২৭ এপ্রিল চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) সঙ্গে জামায়াতের একটি বৈঠক হয়। বৈঠকের পর দলটির ব্রিফিংয়ের সূত্র ধরে সেদিন একাধিক সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, যাতে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য জামায়াতে ইসলামী আলাদা একটি স্বতন্ত্র রাজ্য গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। পরদিন এ বিষয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতিও পাঠায় দলটি। তাতে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘প্রেস ব্রিফিংয়ে আমি যে বক্তব্য দিয়েছি, তাতে মূলত বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক ও নিরাপদভাবে তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করার ব্যবস্থা এবং তাদের জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তোলার বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছি।’

আগের দিন সিপিসির সঙ্গে বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে তাহের বলেছিলেন, ‘আপনারা জানেন, বাংলাদেশে ১১ বা ১২ লাখ রোহিঙ্গা আছে; তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমরা বলেছি, ফুড, ক্লোদিং এবং শেল্টার—এটা কোনো সমাধান নয়। সমাধান হচ্ছে রোহিঙ্গাদেরকে নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসন করা। সে জন্য আমরা একটি প্রস্তাবও দিয়েছি। সেটা হচ্ছে, আরাকানকেন্দ্রিক রোহিঙ্গাদের যে মেজরিটি আছে, সে এরিয়ায় একটি ইনডিপেনডেন্ট আরাকান (রাখাইন) স্টেট করার প্রস্তাব আমরা দিয়েছি।’

আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেছিলেন, ‘চীন এখানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ, মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের বড় ধরনের রিলেশনশিপ আছে। তারা আমাদের এই নিউ প্রপোজাল সম্পর্কে তাদের গভর্নমেন্টকে বলবে এবং উদ্যোগ গ্রহণ করার ব্যাপারে তারা চেষ্টা করবে।’

জামায়াতের এ প্রস্তাবের ছয় দিন পর জান্তা সরকার বিবৃতিতে বলেছে, এটি মিয়ানমারের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করেছে। দেশটির অভিযোগ, জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক সুবিধা পেতে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

জান্তা সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমার সরকার ‘বাঙালি’ (রোহিঙ্গা) শরণার্থী প্রত্যাবাসন নিয়ে বারবার নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।

থাইল্যান্ড থেকে প্রকাশিত ‘দ্য ইরাবতী’ বলছে, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বোঝাতে দেশটির সেনাবাহিনী ‘বাঙালি’ শব্দটি ব্যবহার করে। বিবৃতিতে জান্তা সরকার বলছে, শরণার্থী ফেরানোর ব্যাপারে কুনমিংয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মিয়ানমারের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠক হয়।

মিয়ানমার সরকার বলছে, প্রত্যাবাসনের আগে শরণার্থীদের যাচাই ও নিবন্ধনের নীতি রয়েছে এবং ফিরে আসা শরণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসন গড়ে তোলা হয়েছে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে রোহিঙ্গার ঢল শুরু হয় ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট। এরপর কয়েক মাসের মধ্যে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে ওই এলাকার ক্যাম্পে বসবাস করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে উখিয়ার কুতুপালং পরিণত হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থীশিবিরে।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকার। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতেও সই করে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চলার একপর্যায়ে ২০১৯ সালে দুই দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের প্রতিশ্রুতিতে রোহিঙ্গারা আস্থা রাখতে না পারায় সে চেষ্টা ভেস্তে যায়।