ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারের দাবি উঠছে
শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের ক্রীড়াঙ্গনও আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। দেশের ক্রীড়াঙ্গনেও বছরের পর বছর জমে থাকা অনিয়ম নিয়ে কথা উঠছে। ক্রীড়াঙ্গনের সব ক্ষেত্রে মেরামতের আন্দোলন শুরু হয়েছে। বাফুফে, ক্রিকেট বোর্ড, হকি ফেডারেশন, শুটিং ফেডারেশন, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন থেকে শুরু করে প্রত্যেক ফেডারেশনে অনিয়ম রয়েছে। এবার সব ক্ষেত্রে মেরামতের দাবি উঠেছে।
দেশের ক্রীড়া ফেডারেশন ৫০টির ওপরে। প্রায় প্রত্যেক ফেডারেশনে সরকারের মন্ত্রীরা সভাপতি পদে রয়েছেন। পদে থাকলেও তারা তৎপর ছিলেন না কখনোই। সাধারণ সম্পাদকই ছিলেন সর্বেসর্বা। সাধারণ সম্পাদকরাও ছিলেন একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাসী। তারা নিজেদের পছন্দের লোকবল দিয়ে ফেডারেশন পরিচালনা করে আসছেন। খেলায় কেনো উন্নতি হলো কি না, তার কোন হিসাব ছিল না। জবাবদিহি নেওয়ারও কেউ ছিল না। ক্রীড়া ফেডারেশন ছিল রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত।
কিন্তু এখন দেশের ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো প্রায় সবই রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট ফেডারেশন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকেই মুখ খুলতে চাইছেন না; বিশেষ করে, যারা রাজনৈতিক পরিচয় বহন করেন, তারা এখন ফোনও ধরতে চাইছেন না; কথাও বলতে চাইছেন না। আর যারা রাজনৈতিক পরিচয় বহন করেন না, কিন্তু বন্ধুমহল রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বহন করেন, তাদের কারণে অন্যরা মুখ খুলতে রাজি না; পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন।
তবে যারা আওয়ামী লীগের শাসনামলে ক্রীড়াঙ্গনে ভিড়তে পারেননি, তারা এখন সক্রিয় হয়ে উঠছেন। নানা অনিয়মের কথা তুলে এনে সংবাদ সম্মেলন করছেন। দেশের শুটিং ব্যর্থতায় ঢাকা, এমনটি মনে করছেন দেশের সাবেক তারকা শুটার সাইফুল ইসলাম রিংকি। শুটিং ফেডারেশনের মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ অপু প্যারিস অলিম্পিক গেমস শেষে ব্যর্থতা নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন। শেখ কামাল পুরস্কার গ্রহণ করার জন্য পুরো দলকে প্যারিসে ফেলে রেখে ঢাকায় চলে এসেছিলেন। এসেই তিনি দেখলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নেই।
এসএ গেমসে সোনাজয়ী শুটার সাইফুল আলম রিংকি বলেন, 'বাংলাদেশ শুটিংয়ে সবশেষ সাফ গেমসে স্বর্ণ জিতেছে ২০১৬ সালে, আমার কোচিংয়ে। আমরা যারা দেশের সম্মান বয়ে এনেছি, তাদেরকে সুযোগই দেওয়া হচ্ছে না। আমরা কি বিদেশে চলে যেতে পারতাম না? শুধু দেশের মায়ায় পড়ে আছি। কিন্তু আমাদের তো বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে।'
এই সাবেক শুটারদের অভিযোগ, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শুটিং ফেডারেশনের দুর্নীতিবাজ মহাসচিব পালিয়ে গেছেন। কিন্তু বর্তমানে মহাসচিবের সাঙ্গপাঙ্গরা ফেডারেশনে রয়ে গেছেন এবং তাদের কথামতো সভ পরিচালনা করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ছোট ভাই অপু। তার প্রভাব খাটিয়েই এতোটা প্রতাপশালী হয়ে উঠেছিলেন অপু।
এদিকে অচলায়তন থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসবে দাবা ফেডারেশন তা নিয়ে চলছে আলোচনা করছে। দাবা ফেডারেশনের সভাপতির পদে ছিলেন পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। তার কোনো খোঁজ নেই। ফেডারেশনের দাবি, বেনজীর আহমেদ সভাপতি থাকাকালীন কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেননি। এমনকি স্পন্সর অনারও কোনো উদ্যোগ ছিল না।
কাবাডি ফেডারেশনও বিপদে রয়েছে। এই ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। সভাপতি ছিলেন পুলিশের আইজিপি। তারা কেউ এখন নেই। দেশের জাতীয় খেলাটা এশিয়ান গেমসে পদক জিততে পারছে না বছরের পর। বিপদে পড়েছে আবাহনী। সরকার পতনের পর ক্লাবটিতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়েছে। আবাহনীর চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এখন রিমান্ডে রয়েছেন।
এ পরিস্থিতিতে যদি সভাপতি পদত্যাগ করেন আর ফিফা যদি বিষয়টি আমলে নেয়, তাহলে দেশের ফুটবলের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনবে। ফুটবল ফেডারেশনকে ঢেলে সাজানোর এখনই সুযোগ।