আফিদাদের নিয়ে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক
স্পোর্টস জার্নাল স্পোর্টস জার্নাল
প্রকাশিত: ২০ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৪১ AM

প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপ ফুটবলে অংশ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশের মেয়েরা। বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেও (অনূর্ধ্ব-২০) মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়াটা লাল-সবুজের মেয়েদের জন্য এবারই প্রথম অর্জন। বাছাই পর্বে শতভাগ জয় নিশ্চিত করার পর আফিদা খন্দকারের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে এক লাফে ২৪ ধাপ এগিয়ে বর্তমানে ১০৪তম স্থানে অবস্থান করছে। এটি বাংলাদেশের ফুটবলে এক ঐতিহাসিক অগ্রগতি।

বাংলাদেশ ফুটবলের ঐতিহাসিক এই সাফল্য ও অর্জনের প্রশংসা করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’। বাংলাদেশের অধিনায়ক আফিদা খন্দকার অবশ্য এই সাফল্যে দেশের সব মেয়েকে অংশীদার করতে চান। তিনি সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, ‘এই সাফল্য শুধু আমাদের নয়। বাংলাদেশের প্রতিটি মেয়ের, যারা স্বপ্ন দেখতে সাহস করে। এটি প্রমাণ করে বিশ্বাস, কঠোর পরিশ্রম এবং ঐক্যের মাধ্যমে কী অর্জন করা যায়। তবে আমরা এখানেই থামব না। আগামী কয়েক মাসের প্রস্তুতি কঠিন হবে, আমরা সেই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত।’

আফিদার বাবাও ছিলেন ফুটবলার, খেলেছেন সাতক্ষীরা জেলা পর্যায়ে। কিন্তু পরিবারের হাল ধরতে তাকে ফুটবল ছেড়ে জীবিকার তাগিদে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি দিতে হয়েছিল। পরে দেশে ফিরে তিনি একটি ছোট ব্যবসা শুরু করেন, পাশাপাশি স্থানীয় শিশুদের জন্য গড়ে তোলেন একটি অপেশাদার ফুটবল একাডেমি। যেখানে প্রথম শিক্ষার্থী ছিলেন তার দুই মেয়ে– আফিদা খন্দকার ও তার বড় বোন আফরা। যদিও আফরা বিকেএসপি হয়ে পেশাদার বক্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়েছেন।

বাবার কাছ থেকে ফুটবলের হাতেখড়ি পাওয়া আফিদা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমার ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা বাবার কাছ থেকেই পেয়েছি। তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যে মেয়েরাও ছেলেদের মতো ভালো ফুটবল খেলতে পারে, বরং আরও ভালো। যে কারণে আমাদের তিনি অনেক পরিশ্রম করিয়েছেন। বাড়িতে তিনি আমাদের বাবা, আর খেলার মাঠে তিনি কড়া কোচ এবং কখনোই ছুটি দিতেন না।’ সেই পরিশ্রমের সুফল পেয়েছেন আফিদা ও আফরা। মাত্র ১১ বছর বয়সেই আফিদা বাফুফের ট্রেনিং ক্যাম্পে ডাক পান।

পরিবারের এমন সমর্থন যেকোনো নারীর জন্য প্রেরণার বলে মনে করেন আফিদা, ‘আমরা আসলেই অনেক সৌভাগ্যবান যে বাবা-মায়ের সমর্থন পেয়েছি এবং আমাদের সাফল্য দ্বিধাহীনভাবে অন্য মেয়েদের উৎসাহিত করবে। আমরা অনেক পরিশ্রম করেছি সত্যি, তবে পরিপূর্ণ সমর্থন না পেলে এতটুকু আসা সম্ভব হতো না।’ এভাবে ফুটবলবিশ্বকে বাংলাদেশ তাদের সত্যিকারের সামর্থ্য দেখাতে পারবে বলেও বিশ্বাস ১৮ বছর বয়সী এই অধিনায়কের, ‘আমি চাই সাম্প্রতিক সময়ে মেয়েদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স সঠিক স্বীকৃতি পাক। তবে এটা কেবল শুরু। বাংলাদেশ আরও কী করতে পারে, তা আমরা বিশ্বকে দেখাতে চাই।’

আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় হতে যাওয়া এশিয়া কাপে অংশ নেবে বাংলাদেশের মেয়েরা। সেই টুর্নামেন্ট তো বটেই, আরও বড় স্বপ্নের বসবাস ১৮ বছর বয়সী আফিদার চোখে, ‘পরিবারের সঙ্গে টিভিতে ২০২২ বিশ্বকাপ দেখার সময় ইচ্ছা জেগেছিল– “যদি আমি সেখানে থাকতে পারতাম।” তখন অসম্ভব মনে হয়েছিল। কিন্তু বিশাল সেই স্টেডিয়ামে (চলতি বছরের শুরুতে রাষ্ট্রীয় সফরে) আমার নীরবে দাঁড়ানোর সুযোগ হয়েছে। অবাক হয়ে ভাবছিলাম- আমার আরও কোনো স্বপ্ন হয়তো এভাবে নাগালের দ্বারপ্রান্তে আছে!’