পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আসা জাহাজটিতে যেসব পণ্য রয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৫ AM

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর প্রথমবার পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ নোঙর করেছে। এই জাহাজে কী আছে সেটা নিয়ে কৌতুহল ছিল বিভিন্ন মহলে। তবে উদ্বেগও প্রকাশ করে একটা মহল। মূলত ভারতীয় নিরাপত্ত বাহিনী উদ্বেগ প্রকাশ করলে এটা নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা ও কৌতূহল। এবার জানা গেল পাকিস্তান থেকে আসা জাহাজে কী আছে। জাহাজটিতে বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে বলে জানা গেছে। শিপিং ও কাস্টমসের বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। আগে এসব পণ্য তৃতীয় কোনো দেশ হয়ে আমদানি হতো। সংশ্লিষ্টরা বলছে, নতুন এই প্রক্রিয়া খরচ ও সময় সাশ্রয়ী হওয়ায় ইতিবাচক। এদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আলাদা কোনো চুক্তি বা সুবিধায় নয়, স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই এসব পণ্য বন্দরে নামানো হয়েছে। 

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, দুবাই ও করাচি বন্দর থেকে পণ্যবোঝাই করে পানামার পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় ১১ নভেম্বর। পরদিন জাহাজটি বন্দরে ৩২৮টি কন্টেইনার নামিয়ে ইন্দোনেশিয়া চলে যায়।

কাস্টম ও শিপিং এজেন্ট সূত্র বলছে, ৩২৮টির মধ্যে ৬৪টি কন্টেইনার এসেছে দুবাইয়ের জেবেল আলী বন্দর থেকে। করাচি বন্দর থেকে আনা বাকি ২৬৪টি কন্টেইনারে রয়েছে সোডিয়াম কার্বনেট, ডলোমাইট, চুনাপাথর, ম্যাগনেশিয়াম কার্বনেটের মতো বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল। এর বাইরে আছে পেঁয়াজ, আলু ও শুকনো খেজুর। এসব পণ্যের ওজন ৬ হাজার ৩৩৭ টন। পাকিস্তানের ১৮টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য রপ্তানি করেছে। 

একই জাহাজে পাকিস্তান থেকে দুই কন্টেইনার ৫২ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি করেছেন খাতুনগঞ্জের ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। সরাসরি জাহাজ চলাচলকে আমদানিকারকদের জন্য ইতিবাচকই মনে করছেন তিনি। 

আমদানিকারক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। পাকিস্তান থেকে অনেক পণ্য আমাদের দেশে আসে। আফগানিস্তান থেকে আমদানি করা অনেক পণ্য পাকিস্তান হয়ে আসে। এখানে বুঝতে হবে একটা রিউমার, আরেকটা হচ্ছে ফ্যাক্ট। এই বিষয়গুলো আমাদের জানতে হবে। যেহেতু কন্টেইনার বেশি তাই সরাসরি আসছে। আর এতদিন পাকিস্তানের পণ্য শতভাগ কায়িক পরীক্ষা হতো, এখন সেটি বন্ধ করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ কারণেও হয়তো আলোচনা বেড়েছে।’

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই জাহাজ নিয়ে নানা ভুল তথ্য বিভ্রান্তি তৈরি করছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। পাকিস্তান থেকে অনেক জাহাজ শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুরের বন্দরে আনা হতো চট্টগ্রামমুখী কনটেইনার। পরে এসব বন্দর থেকে চট্টগ্রামমুখী ফিডার জাহাজে তা তুলে দেওয়া হতো। সম্প্রতি দুবাইভিত্তিক কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ‘ফিডার লাইনস ডিএমসিসি’ কয়েকটি দেশের বন্দরকে যুক্ত করে এই সেবা চালু করেছে। 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘করাচির সাথে ডাইরেক্ট শিপিংয়ের কোনো চুক্তি হয়নি। বিশেষ কোনো অনুমতির বিষয়ও এখানে নেই। দুবাই থেকে আসার সময় ওরা কিছু কন্টেইনার নিয়ে আসছে। আগেও করাচি থেকে কন্টেইনার শ্রীলঙ্কা বা সিঙ্গাপুর হয়ে আসত।’

এদিকে যে জাহাজে করে এসব পণ্য এসেছে জাহাজটির দেশীয় প্রতিনিধি এইচ আর শিপিংয়ের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আনিস উদ দৌলা বলেন, ‘সব প্রয়োজনীয় নথি জমা দিয়েই এই জাহাজ আনা হয়েছে। বাংলাদেশের আমদানি পণ্য মূলত কোরিয়া, চীন থেকে আসে। এর বাইরে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়া থেকে আসে। পাকিস্তান থেকেও আসে। পাকিস্তান থেকে আগেও এসেছে।’

পাকিস্তান ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা কনটেইনারে রয়েছে খেজুর, জিপসাম, পুরোনো লোহার টুকরা, মার্বেল ব্লক, কপার ওয়্যার, রেজিন, অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় ইত্যাদি।