পাচারের টাকা আনা হবে, দেশি ঋণখেলাপির সম্পদ জব্দ হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪২ AM

গত ১৫ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ১১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা। পাচার হওয়া এসব অর্থ ফেরত আনা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকের যেসব অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে, তা দেশে ফেরত আনার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। পাচার হওয়া অর্থের বড় গন্তব্য ছিল যুক্তরাজ্য, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য বিশ্বব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সরকার আলোচনা শুরু করেছে। পাশাপাশি দেশে ঋণখেলাপিদের যেসব সম্পদ আছে, সেসব জব্দের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গতকাল বুধবার (০৪ সেপ্টেম্বর) ব্যাংকার্স সভায় এমন তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

জানা গেছে, গতকাল ব্যাংকার্স সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রায় আট মাস পর। এটি ছিল নতুন গভর্নরের প্রথম সভা। এ সভার আলোচ্যসূচিতে নানা বিষয় থাকলেও ঘুরেফিরে সমস্যায় পড়া ব্যাংকগুলো নিয়েই কথা বেশি হয়। বিশেষ করে ইতিমধ্যে যেসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে, সেগুলোর তারল্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ নিয়েও কথা হয়। এতে উঠে আসে, দেশের ১১ ব্যাংক থেকে গ্রাহকেরা টাকা তুলতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে টাকা না ছাপিয়ে বিকল্প উপায়ে এসব ব্যাংককে সহায়তার সিদ্ধান্ত হয়। অন্য ব্যাংকগুলো সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেবে, এতে নিশ্চয়তা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সভা শেষে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এ নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সমস্যায় পড়া ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের স্বার্থ বাংলাদেশ ব্যাংক দেখছে। সরকার এসব ব্যাংকের আমানতকারীদের পাশে আছে। ব্যাংকগুলোর পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ সময় আমানতকারীদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন তিনি।

গভর্নর বলেন, ‘ব্যাংক খাত থেকে বিভিন্নভাবে বড় অঙ্কের অর্থ পাচার হয়ে গেছে। মূলত সাত-আটটি ব্যাংক থেকে এই অর্থ বের হয়েছে। এসব ব্যাংক তারল্য–সংকটে পড়েছে। আমরা আগের মতো টাকা ছাপিয়ে এসব ব্যাংকে দেব না। এটি করতে হলে দুই লাখ কোটি টাকা ছাপাতে হবে। এতে মূল্যস্ফীতি, ডলারের দাম—সবকিছু ঊর্ধ্বমুখী হয়ে যাবে।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমরা তারল্য–সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে সীমিত আকারে টাকা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এসব ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংক থেকে টাকা আমানত হিসেবে পাবে, এতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চয়তা (গ্যারান্টি) দেবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘যেই ব্যাংকগুলো এখন সমস্যায় পড়েছে, আমরা বেশ আগে থেকেই তা জানতাম। এমনকি যাঁরা টাকা জমা রেখেছেন, তাঁরাও সেটা জানতেন। বেশি মুনাফার আশায় অনেকে এসব ব্যাংকে টাকা রেখেছেন। এ জন্য এসব ব্যাংক থেকে বেশি টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ পেয়েছে। তাই যাঁরা টাকা জমা রেখেছেন, তাঁদের কিছুদিন ধৈর্য ধরতে হবে।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন করা হয়েছে। ব্যবস্থাপনাতেও পরিবর্তন আসবে। এসব ব্যাংকে নিরীক্ষা করা হবে। এরপর সিদ্ধান্ত হবে, এসব ব্যাংকের ভবিষ্যৎ কী হবে। এগুলো পুনর্গঠনের মাধ্যমে একা চলবে নাকি কারও সঙ্গে একীভূত হবে, সেই সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে। ছোট ব্যাংক হলে অবসায়ন হতে পারে। ইসলামী ব্যাংকের অর্ধেক টাকা নাই হয়ে গেছে। এক-দুই বছর সময় লাগবে এসব ব্যাংক মেরামত করতে।

গভর্নর আরও বলেন, ‘আমরা বড় ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করে তাদের দেশে থাকা সম্পদ জব্দ করার উদ্যোগ নিয়েছি। পাচার করা অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। এ জন্য বিশ্বব্যাংক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সামনে আরও আলোচনা হবে। আমরা তাদের কাছ থেকে অর্থ ফেরত আনতে ও কারিগরি সহায়তা দিতে আহ্বান জানিয়েছি। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে যে অর্থ পাচার হয়েছে, তা জব্দের জন্য বলছি।’

জনাব মনসুর বলেন, ‘যুক্তরাজ্যেই শুধু একজনের ৫০০-৬০০ বাড়ির তথ্য পাওয়া গেছে। আরও অনেকের এমন সম্পদ রয়েছে। আমাদের অর্থের বড় গন্তব্য যুক্তরাজ্য, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্র। এসব অর্থ ফেরাতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। দেখা যাক কী হয়।’

গভর্নর বলেন, ‘সাত-আটটি ব্যাংকে সমস্যা থাকলেও পুরো ব্যাংকিং কার্যক্রমে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। ব্র্যাক ব্যাংকের আমানতে ২৫-৩০ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি আছে। সমস্যায় পড়া ব্যাংকের আমানতকারীদের আমরা রক্ষা করব। সরকার তাঁদের পাশে আছে। কিন্তু এ জন্য সময় দিতে হবে।’